বাংলাদেশ আর একজন রোহিঙ্গাকেও নেবে না-ঢাকার এমন শক্ত অবস্থানের মধ্যেই সাগরে ভাসা অবস্থান থেকে উদ্ধার হওয়া শ’পাঁচেক রোহিঙ্গার মধ্যে উদ্ধার হওয়া ২৮০ রোহিঙ্গার ঠাঁই হলো নোয়াখালীর ভাসানচরে। এ নিয়ে দিন-পাঁচেকের মাথায় মোট ৩০৯ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে আশ্রয় পেল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জৈষ্ঠ্য কর্মকর্তা তথ্যটি নিশ্চিত করেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘খুব অপ্রস্তুত অবস্থায় বাংলাদেশকে এদের ঠাঁই দিতে হলো। অনেকটা বলতে পারেন, জোর করেই এদের এখানে পাঠানো হয়েছে। আর ২৯ রোহিঙ্গার সঙ্গে ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে।’
এর আগে গত ২ মে দালালচক্রের সহায়তায় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময় রোহিঙ্গাদের এই দলটিকে স্থানীয়দের সহায়তায় আটক করে কোস্টগার্ড। মিয়ানমার থেকে সেই ২৯ রোহিঙ্গারা করোনা ছড়াতে পারে সন্দেহে ভাসানচরে পাঠানো হয়। এর মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়।
করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে মানবপাচারকারীরা শ’পাঁচেক রোহিঙ্গাকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর চেষ্টায় সপ্তাহ-তিনেক আগে ট্রলারে করে সাগর পাড়ি দেয়। কিন্তু মালয়েশিয়ায় প্রবেশে ব্যর্থ হয়ে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা সাগরে ভাসতে থাকে। পরে অবশ্য তাদের আন্দামান ও বঙ্গোপসাগরে তীরগুলো থেকে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। এরই মধ্যে জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে নানান স্তরে চাপ দিতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ সাফ জানিয়ে দেয়, ঢাকার পক্ষে আর একজন রোহিঙ্গাকেও জায়গা দেয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের এমন বক্তব্যের মধ্যে নড়েচড়ে বসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ (ইইউ) আরও তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। তারা প্রথমবারের মতো সাগরে ভাসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য আন্দামান ও বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানান।
রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাঙালি আখ্যা দিয়ে জাতিগত নির্মূলের অভিযোগ আছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের হত্যা-ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। তাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করেও নানা টালবাহানা করছে মিয়ানমার। এর মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা এসেছে ২০১৭ সালের আগস্টে নতুন করে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের দমন-পীড়ন শুরুর পর। এর আগে থেকে বিভিন্ন সময়ে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।