করোনা সংক্রমণে উহানের বাজারের ভূমিকা অনস্বীকার্য: ডব্লিউএইচও

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

করোনার ভয়াল রূপ
করোনার ভয়াল রূপ। ফাইল ছবি

বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনা সংক্রমণ ঘটানোর জন্য চীনের উহান প্রদেশের সি ফুড মার্কেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল বিস্তর। এই বাজার থেকে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) এর সংক্রমণ শুরু হয়েছিল মনে করা হয়। এতদিন পর্যন্ত এ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। এ বিষয়ে শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথমবার মুখ খুলেছে। তারা জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণের নেপথ্যে উহানের ওই বাজারের স্পষ্ট ভূমিকা রয়েছে।

গতবছর নভেম্বরে শুরু হয়েছিল করোনা সংক্রমণ। জানুয়ারি মাসে জীবজন্তুর মাংসের জন্য খ্যাত ওই বাজার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় বেইজিং।

universel cardiac hospital

শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পিটার বেন এমবারেক বলেন, ‘সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে উহানের বাজারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কী হয়েছিল তা এখনও আমরা পরিষ্কার করে জানি না। হতে পারে সংক্রমণ কয়েকগুণ ছড়ানোর উপকরণ ওই বাজারে মজুত ছিল আবার এও হতে পারে এটা শুধুই কাকতালীয়।’

তার কথায়, ‘এটা এখনও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না জীবজন্তুদের থেকেই ওই বাজারের দোকানদারদের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়েছে’। উদাহরণ দিতে গিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই কর্তা বলেন, ‘২০১২ সালে সৌদি আরবে মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। গবেষকদের প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল উৎস খুঁজে পেতে। ঊটের শরীরই যে ভাইরাসের আধার তা বুঝতে সময় লেগেছিল ১৪ মাস।’

অনেকের বক্তব্য, বাদুড় বা ওই জাতীয় প্রাণীর শরীর থেকেই কোভিড সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এর বাইরে চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ল্যাবরেটরিতে তৈরি করে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ, উহানের ভায়রোলজি ল্যাবেই এই ভাইরাস তৈরি করা হয়েছে।

সম্প্রতি এবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও একই অভিযোগ করেন বেজিংয়ের বিরুদ্ধে। যদিও এ ব্যাপারে এদিনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, ল্যাবেই যে ভাইরাস তৈরি হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

চীনের এই বাজারের যে যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে করোনা সংক্রমণে তা বিশ্বের বহু দেশ বললেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এতদিন স্পষ্ট করে কিছুই বলেনি। পৃথিবীর একাধিক রাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই ‘চীনের সুরে কথা বলাকে ভালভাবে নেয়নি। মার্কিন অনুদান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওপর চাপ তৈরি হয়েছিল। বিশ্লেষকের মতে, সেই চাপের ফলেই এতদিন পর উহানের বাজারের ভূমিকা সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এর আগে করোনার উৎস নিয়ে গবেষণা করতে চীনের উহান প্রদেশে একটি টিম পাঠাতে চায় বলে জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিমকে সব ধরনের সাহায্য করবে। তারাও চায় এই বিতর্কে একটা উপসংহার টানা হোক।

শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখন সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ দুটি জিনিস খুঁজে বের করা। এক, কোনও প্রাণীর শরীর থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে কিনা এবং দুই, ছড়ালে কী ভাবে তা মানব শরীরে প্রবেশ করল।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে