করোনা : আশার আলো দেখাচ্ছেন হংকংয়ের একদল গবেষক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

করোনার ভ্যাকসিন
প্রতীকী ছবি

বৈশ্বিক মহামারি নভেল করোনা ভাইরাস তথা কোভিড-১৯ এর কার্যকর ভ্যাকসিন ও ওষুধ তৈরিতে উঠেপড়ে লেগেছেন গবেষক-বিজ্ঞানীরা। এরইমধ্যে কয়েকটি দেশের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত টিকা মানবশরীরে প্রায়োগিক পর্যায়ে রয়েছে।

তবে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের সারিয়ে তুলতে চিকিৎসকরা ব্যবহার করছেন পুরনো কিছু ওষুধ। এবার এমন চারটি ওষুধের সমন্বয় ঘটিয়ে করোনা চিকিৎসায় আশার আলো দেখাচ্ছেন হংকংয়ের একদল গবেষক।

সংক্রমণরোধী তিনটি ওষুধ ও মাল্টিপল স্কলেরোসিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত একটি ওষুধের সমন্বিত প্রয়োগ নতুন করোনা ভাইরাসে তথা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের তুলনামূলকভাবে দ্রুত সারিয়ে তুলতে পারে।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. কোকো-ইয়ুং ইউয়েন ও তার সহকর্মীরা একাজে সফল হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। সংক্রামক ব্যাধির ওপর কোকো-ইয়ুং ইউয়েনের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। ওষুধের এই সমন্বয়ের গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।

চিকিৎসা বিষয়ক বিশ্বখ্যাত জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণাটির বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, তারা যে ওষুধগুলোর সমন্বয়ে করোনা রোগীর চিকিৎসার কথা বলছেন তা চিকিৎসার একটি পদ্ধতি হতে পারে। এটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলে এক্ষেত্রে যুগান্তকারী ফল আসতে পারে।

বর্তমানে রেমডিসিভির নামের একটি ওষুধকে করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যদিও এ ওষুধটি পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর্যায়ে রয়েছে এখনও। বাংলাদেশেও এরইমধ্যে ওষুধটি উৎপাদন শুরু করেছে দেশীয় ছয়টি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, রেমডেসিভির করোনা চিকিৎসায় ‘কার্যকর’। তবে ওষুধটির সরবরাহ এখনও অত্যন্ত সীমিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি করোনা চিকিৎসায় ওষুধটির অনুমোদন দেয়ার পর দেশটির একটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি এটি তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছে।

আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে বলেছে, কোকো-ইয়ুং ইউয়েন ও তার সহকর্মীরা কয়েকটি ওষুধের সমন্বয়ে করোনা চিকিৎসার বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলেন। তারা এইচআইভির ওষুধ রিটোনাভির ও লোপানিভিরের সঙ্গে সাধারণ সংক্রমণরোধী ওষুধ রিবাভিরিন এবং মাল্টিপল স্কলেরোসিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ বেটা ইন্টারফেরের সমন্বয় ঘটান।

গবেষণাকালে তারা এমন রোগীদের বাছাই করেন যাদের সাত দিন আগে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধরা পড়ে। তাদের করোনা উপসর্গ ছিল হালকা থেকে মাঝারি মাত্রায়। এদের মধ্যে কিছু রোগীর ওপর শুধু এইচআইভির চিকিৎসায় ব্যবহৃত দুটি ওষুধের প্রয়োগ করেন ইউয়েনের সহকর্মীরা। বাকিদের ওপর এইচআইভির দুটি ওষুধসহ সাধারণ সংক্রমণরোধী ও মাল্টিপল স্কলেরোসিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের ককটেল প্রয়োগ করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ওপর সমন্বয় ঘটানো (ককটেল) ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে তারা সাতদিনের মধ্যেই সেরে উঠেছেন। আর যাদের ওপর শুধু এইচআইভির ওষুধ প্রয়োগ করা হয় তারা ওষুধ প্রয়োগের ১২ দিন পরও করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।

এই চিকিৎসায় সামান্য কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে বলে গবেষকরা ল্যানসেটে জানিয়েছেন। তবে এসব ওষুধের সমন্বয়ে উদ্ভাবিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে আশা দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান ফ্রান্সিসকোতে কর্মরত ডা. পিটার চিন-হং।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডা. পিটার সিএনএনকে বলেন, ‘এই গবেষণার ফল আসলেই স্বস্তিদায়ক। কেননা এখানে আমরা তেখতে পাচ্ছি রেমডেসিভির ছাড়া অন্য ওষুধও করোনার চিকিৎসায় ভালো ফল দিতে পারে।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে