সোমবার থেকে চালু হচ্ছে ভার্চুয়াল আদালত

আইন ও বিচার ডেস্ক

হাইকোর্ট
হাইকোর্ট। ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে নিয়মিত আদালত বন্ধ থাকায় ভার্চুয়াল আদালত চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাইকোর্টে বসবে তিনটি বেঞ্চ।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বসবে। এসব আদালতে জামিন আবেদনসহ যেকোনো জরুরি বিষয় শুনানি করা যাবে। তবে সারা দেশে নিম্ন আদালতগুলোতে শুধুমাত্র জামিনের আবেদন শুনানি করা যাবে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের স্বাক্ষরে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

জানা গেছে, আগামীকাল সোমবার থেকেই এই আদালত কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এই ব্যবস্থায় আইনজীবীরা যদি আজ আবেদন করেন তাহলেই কেবল বিচার কাজ পরিচালিত হবে। এক্ষেত্রে আবেদন পাবার পর তবে কখন, কিভাবে শুনানি হবে সেবিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারক নির্ধারণ করবেন।

এদিকে ভার্চুয়াল আদালত কিভাবে শুনানি গ্রহণ করবে, আদেশ বা রায় দেবে, আইনজীবীরা কোথায় আবেদন বা মামলা দাখিল করবে, কিভাবে শুনানি করবেন সে বিষয়ে ১৪ দফা প্রাকটিস নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এসব বিধান হাইকোর্ট রুলস-এ যুক্ত করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এই সভায় সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা অংশ নেন। এই সভায় বিচারপতিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।

ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ফুলকোর্ট সভার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে সোমবার থেকেই আদালত কার্যক্রম চালু হয়ে গেলো। এখন আইনজীবীরা আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট আদালত সেবিষয়ে পরবর্তী নির্দেশনা দেবেন।

প্রাকটিস নির্দেশনা

প্রাকটিস নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কেন আবেদনটি জরুরি তা সংক্ষিপ্তভাবে এক পৃষ্ঠার মধ্যে লিখে সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চের বেঞ্চ অফিসারের ই-মেইলে পাঠাতে হবে আইনজীবীকে। বেঞ্চ অফিসার তা ই-মেইলের মাধ্যমেই বিচারপতি কাছে উপস্থাপন করবেন। অনুমতি পাবার পর ই-মেইলেই আবেদন দাখিল করতে হবে। সেক্ষত্রে কিছু নিয়ম মানতে হবে। নিয়ম মেনে আবেদন করার পর তার কপি পাঠানো হবে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে। এরপর শুনানির সময় নির্ধারণ করে অনলাইন কার্যতালিকা প্রকাশ করা হবে। কার্যতালিকায় দেওয়া সময় অনুযায়ী শুনানি হবে। আদালত পরিচালনা করতে যেয়ে কোনো অসুবিধা হলে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করতে পারবেন।

হাইকোর্টের এখতিয়ার

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের বেঞ্চে অতি জরুরি সকল প্রকার রিট ও দেওয়ানি মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চে অতি জরুরি সকল ধরণের ফৌজদারী মোশন ও তৎসংক্রান্ত জামিনের আবেদনপত্র এবং বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চে অন্যান্য মামলার শুনানি করা যাবে।

নিম্ন আদালতের জন্য জারি করা নির্দেশনা

সারা দেশে আদালত পরিচালনার বিষয়ে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৬ মে পর্যন্ত আদালত বন্ধ থাকবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাপ্তাহিক ছুটি ও বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত বর্ষপঞ্জিতে ছুটি ব্যতিত বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, বিশেষ জজ আদালতের বিচারক, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অথবা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অথবা তার নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার-২০২০ এবং বিশেষ নির্দেশনা অনুসরণ করে শুধুমাত্র জামিন সংক্রান্ত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে আদালত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা বলবৎ থাকবে।

ভার্চুয়াল আদালত কার্যক্রম চালুর বিষয়ে আইনজীবীদের অব্যাহত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ এপ্রিল ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অুনযায়ী দেশের সকল আদালতে জরুরি বিষয় শুনানির জন্য ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা চালু করতে রাষ্ট্রপতিকে অধ্যাদেশ জারির জন্য অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করা করা হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই আবেদন পাবার পর রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার আলোকে আইন মন্ত্রণালয় শনিবার গেজেট প্রকাশ করে। আদালতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০ নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এই অধ্যাদেশের ক্ষমতাবলে ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার মাধ্যমে আদালতকে মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ বা রায় দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়।

এই অধ্যাদেশ জারি পর সুপ্রিম কোর্টের বিচার কাজ পরিচালনার জন্য হাইকোর্ট রুলস-এও এ ব্যবস্থা অন্তর্ভূক্তির প্রয়োজন পড়ে। একারণে আজ প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় ভার্চুয়াল ব্যবস্থা হাইকোর্ট রুলস-এ অন্তর্ভূক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সঙ্গে তালমিলিয়ে গত ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে আদালতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ক্রমেই সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়ছে। আপাতত আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি রয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে