প্রায় প্রতি অর্থবছরই বাড়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার। আগামী অর্থবছরেও (২০২০-২১) এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না, করোনাভাইরাসের ধাক্কা সত্ত্বেও। বরং চলতি অর্থবছরের চেয়েও বড় হচ্ছে আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার। এরই মধ্যে এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। খসড়া অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপির আকার হবে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ মূল এডিপি বাড়ছে দুই হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। চলতি এডিপি সংশোধনের পর দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপির তুলনায় নতুন এডিপির আকার দেখা যাচ্ছে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।
মঙ্গলবার (১২ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় নতুন এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। পরবর্তীতে এনইসি সভায় এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে।
করোনাভাইরাসের আঘাতের কারণে কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতকে বেশি অগ্রাধিকার দিতে বিভিন্ন মহল থেকে প্রস্তাব আসছে সম্প্রতি। চলতি এডিপির তুলনায় নতুন এডিপির আকার বড় হওয়ায় স্বাভাবিক নিয়মেই এই দুই খাতে বরাদ্দ বেড়েছে কিছুটা। তবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়নি। সর্বোচ্চ গুরুত্বের দিক থেকে ৭ নম্বরে স্বাস্থ্য এবং ৮ নম্বরে রয়েছে কৃষি। খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে পরিবহন, যা মোট বাজেটের ২৫ শতাংশ বা চার ভাগের এক ভাগ।
আর প্রকল্পভিত্তিক সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। দ্বিতীয় স্থানে পদ্মাসেতু এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প।
কমিশন সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুমোদন শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, নতুন এডিপিতে ১০টি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রথম হলো পরিবহন, যা সড়ক ও সেতু মিলিয়ে। এতে বরাদ্দ মোট বাজেটের ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। মানে চার ভাগের এক ভাগ। অংকে ৫২ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। অবকাঠামো, পানি ও গণপূর্ত খাত দ্বিতীয় গুরুত্ব পেয়েছে। এখাতে বরাদ্দ বাজেটের ১৩ শতাংশ, অংকে ২৫ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা। তৃতীয় গুরুত্ব পেয়েছে বিদ্যুৎ খাত। এখাতে বাজেটের ১২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। খরচ হবে ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। চতুর্থ স্থানে রয়েছে শিক্ষা ও ধর্ম। এখাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ, অংকে ২৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। পঞ্চম গুরুত্ব পাওয়া বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের ৯ শতাংশ। এতে মোট ব্যয় হবে ১৮ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা।
ষষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের ৮ শতাংশ। এতে মোট ব্যয় হবে ১৫ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। সপ্তম গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় খাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের প্রায় ৭ শতাংশ, টাকায় যার পরিমাণ ১৩ হাজার ৩৩ কোটি। অষ্টম গুরুত্বপূর্ণ কৃষি খাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের ৪ শতাংশ, টাকায় যার পরিমাণ ৮ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। এরপর পানিসম্পদ খাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের প্রায় ৩ শতাংশ বরাদ্দ, টাকায় যার পরিমাণ ৫ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। দশম গুরুত্বপূর্ণ খাত জনপ্রশাসনে বরাদ্দ মোট বাজেটের প্রায় ২ শতাংশ। এতে খরচ করা হবে ৪ হাজার ৪৯ কোটি টাকা। এই ১০টি হলো উচ্চ খাত।
সাতটি মেগা প্রকল্পে বরাদ্দের প্রস্তাব তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, মেগা প্রকল্পের মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে বরাদ্দ থাকছে ১৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। তারপরে রয়েছে পদ্মা সেতু, এতে বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে রয়েছে মেট্রোরেল, এতে বরাদ্দ ৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। চতুর্থ স্থানে থাকা মহেশখালী মাতারবাড়ির কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পে বরাদ্দ ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। পঞ্চম গুরুত্ব পাওয়া পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। পদ্মাসেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প ষষ্ঠ গুরুত্ব পেয়েছে। এতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। সপ্তম গুরুত্ব পাওয়া দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা।