মুম্বাইয়ে ‘ম্যাডাম ফুলি’ খ্যাত চিত্রনায়িকা শিমলার একাকী জীবন

বিনোদন প্রতিবেদক

‘ম্যাডাম ফুলি’ খ্যাত চিত্রনায়িকা শিমলা

ঝিনাইদহ থেকে পালিয়ে ঢাকায় আসার পর পরিচিতজনের মাধ্যমে গুণী পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের সঙ্গে যোগাযোগ। এরপর তারই পরিচালিত ‘ম্যাডাম ফুলি’ ছবিতে সুযোগ পেয়ে যান। ছবিটি মুক্তির পর শিমলা পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘ম্যাডাম ফুলি’ হিসেবে।

ছোটবেলায় বাড়ি থেকে পালিয়ে সেখানে শাবানা, কবরী ও ববিতাদের সিনেমা নিয়মিত দেখতেন। আর মৌসুমী ও সালমান শাহর ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দেখার পর চলচ্চিত্রের নায়িকা হওয়ার ঝোঁক প্রবল হয়। বললেন, ‘আয়নার সংলাপ নকল করতাম। মাকে বললাম, আমি নায়িকা হব। মা ভাবলেন, আমি পাগল-টাগল হয়ে গেলাম মনে হয়। পড়াশোনা গেল গোল্লায়। কোনোমতে এসএসসি পাস করে ইন্টারে ভর্তিও হই। সিনেমার নেশায় এরপর পড়াশোনা আর হয়নি।’

universel cardiac hospital

প্রথম ছবিতে অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। যেই নায়িকা প্রথম ছবিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন, তিনি এখন কোথায়?

শিমলা যে ফোনটি ব্যবহার করেন সেটি বন্ধ। পরিচিতজনদের কেউও তার কোনো খবর দিতে পারছিলেন না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার ভারতীয় নম্বর পাওয়া গেল। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর ফোন ধরলেন। জানালেন, তিনি এখন মুম্বাইয়ে আছেন। লকডাউন শুরুর আগেই মুম্বাই গেছেন। এখন সেখানেই তার একাকী দিনকাল কাটছে।

কথা প্রসঙ্গে শিমলা জানালেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে মুম্বাইয়ের মীরা রোডের একটি বাড়িতে থাকছেন। বলিউডে কাজ করার স্বপ্ন নিয়েই শিমলা যান ভারতের মুম্বাইয়ে। এরই মধ্যে ‘সফর’ নামের একটি ছবিতেও অভিনয় করেছেন। জানালেন, তার সঙ্গে বলিউডের গোবিন্দর ভালো যোগাযোগ আছে।

সংগীতশিল্পী বাপ্পী লাহিড়ীর মাধ্যমে তার এই বলিউড যোগাযোগ তৈরি হয়। তবে ওখানে অনেক হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তারপর যেসব সুযোগ পাচ্ছেন, কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। লকডাউন শুরুর আগে গোবিন্দর সঙ্গে একটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করার কথা ছিল। অনেক দিন ধরে নাচের মহড়াও করছিলেন।

মুম্বাইয়ে শুরুতে মাসহ থাকলেও এখন একা থাকছেন। বললেন, ‘মুম্বাই বেশ ব্যয়বহুল শহর। আমি এখানে সাদামাটাভাবেই থাকছি। কষ্ট করছি। যদি সফলতা পাই, তখন ভিন্নভাবে চিন্তাভাবনা করব।’ অভিনয়জীবনের শুরুতে শিমলা একসঙ্গে তিনটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন। ‘ম্যাডাম ফুলি’ ছাড়া বাকি দুটো ছবি হচ্ছে ‘পাগলা ঘণ্টা’, ‘ভেজা বেড়াল’। কয়েক বছর ধরে ৩৫টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের সিনেমায়ও অনিয়মিত। সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’। আর শুটিং করেছেন ‘নাইওর’ ছবির।

সমসাময়িক তারকাদের তুলনায় শিমলা অভিনীত ছবির সংখ্যা অনেক কম। বিষয়টিকে তিনি ভাগ্যের লিখন বলেই চালিয়ে দিলেন। বললেন, ‘আমার সময় পরিচালকেরা অন্য ব্যস্ত শিল্পীদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তারা আমাকে নিয়ে ভাবার সময় হয়তো পাননি। তাই যত বেশি কাজ করা উচিত ছিল, তা করা হয়নি।’ এসবে মোটেও বিচলিত নন। বললেন, শিমলার চেয়ে ‘ম্যাডাম ফুলি’ নামে মানুষ বেশি চেনে। একটি চরিত্র হয়ে দর্শকহৃদয়ে বেঁচে থাকতে পারাটা একজন শিল্পীর অনেক বড় পাওয়া। অনেক বছর ছবি নিয়ে খবরের পাতায় আলোচিত নন শিমলা।

হঠাৎ করে গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে শিমলা খবরের শিরোনাম হলেন। তখনো তিনি মুম্বাইয়ে। ছবির কোনো কারণে কারণে নয়, শিমলা আলোচিত হন বিমান ছিনতাইয়ের মতো একটি ঘটনাকে নিয়ে তাকে নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিটি নিজেকে শিমলার স্বামী দাবি করেন। শিমলা অবশ্য সেই সময়টার কথা মনে করতে চান না। বললেন, ‘ওটার আইনি সমাধান হয়েছে। এসব নিয়ে আমি আর ভাবতে চাই না।’ শৈলকূপায় বাড়ির পাশে একটি সিনেমা হল ছিল। ছয় ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে শিমলা সবার ছোট। ভীষণ আদরের।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে