করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ২৬ মার্চ থেকে চলছে টানা সাধারণ ছুটি। সারা দেশ কার্যত অচল। জরুরি কাজ ছাড়া সবাইকে বাসা-বাড়িতে থাকার অনুরোধ করছে সরকার। করোনার প্রভাবে অবরুদ্ধ অবস্থার মধ্যে বেড়েছে সামাজিক অস্থিরতা ও পারিবারিক কলহ।
বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট উপকূলের ছয়টি জেলায় জরিপ করে দেখেছে যে ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গালাগালি বা কটূক্তির ঘটনা ঘটেছে ৮২ শতাংশ পরিবারে। ৯ শতাংশ পরিবারে গায়ে হাত তোলা এবং ৯ শতাংশ পরিবারে যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সুবিধা না থাকায় চড়া সুদে মহাজনী ঋণ নিয়েছেন ৬৩ শতাংশ মানুষ।
কোস্ট ট্রাস্টের মনিটরিং ও গবেষণা বিভাগ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, বরিশালসহ উপকূলের ৬টি জেলায় কোস্ট ট্রাস্টের ১২টি শাখার অধীনে ২৪০ জন দরিদ্র, নারী প্রধান ও নিম্ন আয়ের পরিবারের মধ্যে এই জরিপ চালানো হয়। ৮৩ শতাংশ উত্তরদাতা গ্রামে এবং ১৭ শতাংশ শহরে বাস করেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ নারী-প্রধান পরিবার।
জরিপ সম্পর্কে কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় মহাজনী ঋণ শোধ করতে না পারায় একজন দরিদ্র মানুষকে হত্যা করা হয়। নিম্ন আয়ের মানুষের সংকট বুঝতে পেরেই আমরা এই জরিপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
তিনি আরও বলেন, খাদ্য সংকটে পড়া মানুষের সহায়তায় কোস্ট ট্রাস্ট তার নিজস্ব আয় থেকে উপকূলীয় ৯টি জেলা ও ৪৯টি জেলা প্রশাসনের ত্রাণ তহবিলে প্রায় ২০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশে ঘোষিত লকডাউনের ফলে উপকূলে দরিদ্র মানুষের জীবিকার উপর কী ধরনের প্রভাব পড়েছে তা নিয়ে ছয়টি জেলায় জরিপ করেছে কোস্ট ট্রাস্ট। এই জরিপে দেখা গেছে, লকডাউনের ফলে খাদ্য সংকটে পড়েছেন ৫৭ শতাংশ পরিবার। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ব্যবস্থা না থাকা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছেন ৬৩ শতাংশ। লকডাউনে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় সঞ্চয় ভেঙে ফেলেছেন ৪৮ শতাংশ পরিবার। গরু-ছাগল বিক্রি করে ফেলেছেন ৩৫ শতাংশ পরিবার।
নারী-প্রধান পরিবারগুলোর মধ্যে ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, সঞ্চয় ভাঙা, গরু-ছাগল বা গহনা বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
জরিপে দেখা যায়, ৪২ শতাংশ পরিবার দিনে তিন বেলা খাদ্যগ্রহণ চালিয়ে যেতে পারছেন। দিনে দুই বেলা খাদ্য গ্রহণ করছেন ৫২ শতাংশ পরিবার এবং ৫ শতাংশ পরিবার একবেলা করে খাচ্ছেন।
লকডাউনের কারণে পরিবারের আয় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৪ শতাংশ পরিবারের, আয় এক-চতুর্থাংশে নেমে এসেছে ৩৯ শতাংশ পরিবারের এবং অর্ধেকে নেমে এসেছে ১৯ শতাংশ পরিবারে। চলমান মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে ৬৩ শতাংশ পরিবার চড়া সুদে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করেছেন ১৮ শতাংশ পরিবার।