হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন করোনা চিকিৎসায় কাজ করে না, বরং ক্ষতি

মত ও পথ ডেস্ক

ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন

ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন (এইচসিকিউ) করোনা চিকিৎসায় কাজ দিতে পারে ভেবে অনেক দেশই ওষুধটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও এতে উপকারের পরিবর্তে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা তৈরি হয় বলে নতুন দুটি গবেষণায় দেখা গেছে।

নভেল করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ক্ষেত্রে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন কাজ করে কি-না তার ওপর ওই দুটি গবেষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। শুক্রবার ফ্রান্স ও চীনে দুটি গবেষণার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়।

করোনা মহামারির মধ্যে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন চিকিৎসা কর্মীদের প্রথম ব্যবহারের অনুমতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ওষুধটির অন্যতম উৎপাদক দেশ ভারত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানি করবে না জানালে তার জন্য হুমকিও দিয়েছিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এরপর নমনীয় মোদি সরকার তড়িঘড়ি করে যুক্তরাষ্ট্রকে ওষুধটি পাঠাতে শুরু করে। আবার রাজনৈতিক চাল হিসেবে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশকে ওষুধটি উপঢৌকন হিসেবেও পাঠাতে শুরু করে মোদি সরকার।

এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ম্যালেরিয়ায় ব্যবহৃত প্রদাহ-নিরোধক ওষুধটি করোনা রোগীদের বেলায়ও ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে কাজ করবে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুটি গবেষণার প্রাপ্ত ফল হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতাকে বড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল।

ফরাসী গবেষকদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮১ জন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেছেন তারা। যেসব রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তাদের অক্সিজেন সরবরাহের দরকার হয়েছিল। এদের মধ্যে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগসহ চিকিৎসা দেওয়া হয় ৮৪ জনকে। বাকি ৯৭ জন রোগীর চিকিৎসা চলে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ ছাড়াই।

তবে দুটি দলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি। উপরন্তু প্রত্যেককেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে নিতে হয়েছে। কেউ কেউ সাত দিনের মারা গেছেন আর কেউবা ১০ দিনের মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন।

বিএমজে গ্লোবাল হেলথ জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির গবেষকদের ভাষ্য, করোনা তথা কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন বিশ্বজুড়ে নজর কেড়েছে। কিন্তু তাদের গবেষণায় এই ওষুধের প্রয়োগ সমর্থন করার মতো কোনো কিছু পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে চীনের আরেকদল গবেষকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা ১৫০ জন করোনা রোগীকে দুই গ্রুপে ভাগ করে চিকিৎসা পর্যবেক্ষণ করেন। একটি গ্রুপে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ করা হয়। অন্যটির স্বাভাবিক চিকিৎসা চালানো হয়। কিন্তু একমাসের মাথায় এসে উভয় গ্রুপের মধ্যেই করোনা সংক্রমণের মাত্রা একইরকম বলে তারা লক্ষ্য করেন। বরং হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ করা রোগীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, যা করোনার করাণে সৃষ্ট নয়।

উল্লেখ্য, বহু বছর ধরে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন। তবে করোনাভাইরাসের মহামারী চলার মধ্যে বিশ্বজুড়ে গুজবের মতো ছড়িয়ে পড়ে এই ওষুধ করোনা রোগীদের চিকিৎসায়ও কাজে দেয়। এমন প্রচারের মধ্যে গত মাসে ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি এই ওষুধ প্রয়োগে রোগীর হৃদযন্ত্রের বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছিল।

চলতি বছরের শুরু থেকেই নভেল করোনাভাইরাসের মহামারির কবলে গোটা বিশ্ব। এরইমধ্যে তিন লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া এই মারণব্যাধির এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে