১৪ তারিখ বিকাল বেলা যখন জানতে পেরেছি আনিসুজ্জামান স্যার চলে গেছেন, তখন মনটি গভীর এক ধরনের বিষাদে ভরে গেল। অনেকদিন থেকেই শুনছি স্যার অসুস্থ। ভালো কোনো খবর পাচ্ছিলাম না, মনের ভেতর কেমন যেন কুডাক দিচ্ছিল।
তারপরেও আশায় বুক বেঁধে বসেছিলাম, কয়েক বছর আগেও তো স্যার আরও একবার অসুস্থ হয়েছিলেন। সবাই মিলে স্যারকে সুস্থ করে ফিরিয়ে এনেছেন—এবারে কেন হবে না? কিন্তু স্যার চলেই গেলেন। এখনো মেনে নিতে পারছি না যে, একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখব না- স্যার সামনের সারিতে বসে আছেন। আমি তার সামনে উবু হয়ে বসে স্যারকে সালাম দিচ্ছি, স্যার আমার খোঁজ নিচ্ছেন, আমার পরিবারের অন্য সবার খোঁজ নিচ্ছেন। খুব বেশি কিছু তো চাইনি—এইটুকুই চেয়েছি, এইটুকুতেই তো বুকটা ভরে যেতো। সেটুকুও আর কখনো পাব না?
প্রফেসর আনিসুজ্জামানের নাম আমি প্রথম শুনেছি আমার বাবার কাছে, সেই ষাটের দশকে। আমরা তখন কুমিল্লায় থাকি। আমার বাবা তার পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে একদিন দূরে কোথাও গিয়েছেন, ফিরে এসেছেন গভীর রাতে। এসে আমাদের বললেন, দাউদকান্দি ফেরিঘাটে একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, সেই অ্যাক্সিডেন্টে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আহত হয়েছেন। আমার বাবা সেই আহত শিক্ষককে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ফিরে এসেছেন। সেই অধ্যাপকের নাম আনিসুজ্জামান। সেই আনিসুজ্জামান তখনো আজকের আনিসুজ্জামান হননি, তারপরও আমার বাবা মুগ্ধ হয়ে আমাদেরকে তার গল্প করলেন।
সাহিত্যের জন্য আমার বাবার প্রবল অনুরাগ ছিল। সংসার চালানোর জন্য পুলিশে চাকরি করতেন কিন্তু সাহিত্যের কাউকে পেলে আমার বাবা মুগ্ধ হয়ে যেতেন। তাই যুবক আনিসুজ্জামানকে দেখে আমার বাবার মুগ্ধ হওয়ার অনেক কারণ ছিল।
তারপর বহুদিন কেটে গেছে। একবার আনিসুজ্জামান স্যার আমেরিকা এসেছেন, আমিও তখন আমেরিকা। খবর পেয়ে স্যারের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। কথাবার্তার মাঝে একসময় বললাম, “স্যার, আপনি কি জানেন আপনি একবার দাউদকান্দি ফেরিঘাটে অ্যাক্সিডেন্টে পড়েছিলেন, তখন যে পুলিশ অফিসার আপনাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছিলেন- তিনি ছিলেন আমার বাবা।”স্যার মৃদু হাসলেন, বললেন, “হ্যাঁ, আমি সেটা জানি। সেই দিনটির কথা আমার মনে আছে। সেটি ছিল…, তারপর স্যার তারিখটি বললেন। আমরা সেদিন যারা সেখানে উপস্থিত ছিলাম সবাই তখন একসঙ্গে চমকে উঠলাম। কারণ, সেদিনের তারিখটিই ছিল অনেক বছর আগে স্যারের সেই অ্যাক্সিডেন্টের তারিখ! কী আশ্চর্য যোগাযোগ, কী কাকতালীয় একটা ব্যাপার।
আমার বাবার জন্য নাকি অন্য কোনো কারণ আছে আমি জানি না, কিন্তু আমার সবসময়ে মনে হয়েছে, আমাদের পরিবারের সবার জন্য স্যারের এক ধরনের মমতা ছিল। আমরা সবাইও স্যারকে আমাদের নিজেদের একজন আপনজন বলে জানতাম। বড় ধরনের অসুস্থতা থেকে ফিরে আসার পর স্যার আবার ছোট বড় মাঝারি সব অনুষ্ঠানে সভাপতি কিংবা প্রধান অতিথি হতে শুরু করেছিলেন। স্যার ভালো হয়ে গেছেন সেটি ছিল তার একটা প্রমাণ— কিন্তু আমার মনে হতো তাকে এ রকম ঢালাওভাবে এতো ধরনের অনুষ্ঠানে টানাটানি করাটা ঠিক হচ্ছে না, আয়োজকরা শুধু নিজের দিকটি দেখছে, স্যারের সুবিধা-অসুবিধা দেখছে না।
এ রকম সময়ে আমার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের তারিখ ঠিক হয়েছে, সবাইকে কুরিয়ারে বিয়ের কার্ড পাঠিয়েছি কিন্তু আনিসুজ্জামান স্যারের কাছে নিজে বিয়ের কার্ড নিয়ে গেছি। স্যারকে বললাম, “স্যার আমার মেয়ের বিয়ে আর আপনাকে কার্ড দিচ্ছি না, সেটা তো হতে পারে না। সেজন্য কার্ড নিয়ে এসেছি। কিন্তু আমি জানি ঢাকা শহরে বিয়ের অনুষ্ঠানের মতো যন্ত্রণা আর কিছু হতে পারে না। তাই আপনাকে বলতে এসেছি, আপনাকে কষ্ট করে আসতে হবে না। দূর থেকে আমার মেয়ের জন্য একটু শুভকামনা করে দিলেই হবে।”স্যার কিছু বললেন না, আমার কথা শুনে একটুখানি হাসলেন!
কী আশ্চর্য, বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় দেখি স্যার তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে এসেছেন। কী আনন্দ! কী আনন্দ! স্যার নিচে এক জায়গায় বসেছেন আর অতিথিরা এসে কেউ সামনে দাঁড়িয়েছেন, কেউ স্যারের পায়ের কাছে বসছেন, কেউ পাশে কিংবা সামনে চেয়ার টেনে বসছেন। স্যারের কোনো ব্যস্ততা নেই, কোনো তাড়াহুড়ো নেই। মুখে তার সেই লক্ষ টাকার মৃদু হাসিটি নিয়ে বসে আছেন, কথা বলছেন। কী অপূর্ব একটি দৃশ্য। এই পৃথিবীতে আর কে আছে, যে আমাকে এতো আনন্দ দিতে পারবে? সেই স্যার এখন কোথায় চলে গেলেন?
আমরা সবাই স্যারের অগাধ পাণ্ডিত্যের কথা জানি, তার আদর্শের কথা জানি, কর্মময় জীবনের কথা জানি। কিন্তু যারা তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন, তারা তার তীক্ষ্ণ রসবোধের কথা জানে। একটা ছোট উদাহরণ দিই। স্যারকে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমিরেটাস প্রফেসর হিসেবে সম্মানিত করেছে (সেজন্য আমার প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য অসীম কৃতজ্ঞতা—রাষ্ট্র কিংবা পৃথিবী সম্মানিত করার পরও সব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের যোগ্য শিক্ষকদের এভাবে সম্মানিত করে না) তখন একটি অনুষ্ঠানে আমিও মঞ্চে স্যারের পাশে বসে আছি। মাইকে বক্তারা গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন। হঠাৎ স্যার গলা নামিয়ে আমাকে বললেন, “এমিরেটাস প্রফেসর হওয়ার পর একজন আমাকে কী বলেছেন জানো?” আমি বললাম, “কী বলেছেন, স্যার?” স্যার বললেন, “বলেছেন, শুনলাম আপনি মিডল-ইস্টে আমিরাতের প্রফেসর হয়েছেন—এখন আপনাকে কি আমিরাত যেতে হবে?” স্যার বলেছেন খুবই সরল মুখে, কিন্তু তার মুখের কথা শুনে হাসতে হাসতে আমার চোখে পানি আসার মতো অবস্থা।
স্যার আমাদের কাছে যেরকম আপনজনের মতো ছিলেন, এই দেশের যত নূতন লেখক, যত অপরিপক্ক লেখক- তাদের কাছেও সেরকম আপনজন ছিলেন। কিছু একটা লিখেই তারা নিশ্চয়ই পাণ্ডুলিপি হাতে স্যারের কাছে হাজির হয়ে যেতো। স্যারও অম্লান বদনে দুই কলম লিখে দিতেন, কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, স্যার কিন্তু জীবনেও কোনো লেখককে অকারণে প্রশংসা করেননি, যে যোগ্য নয় তার সম্পর্কে অতিরঞ্জিত একটি শব্দ ব্যবহার করেননি। কিন্তু স্যারের কলমের এমনই জোর যে নতুন লেখকেরা স্যার যেটুকু লিখতেন তাতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতো। স্যার কীভাবে এই অসাধ্য সাধন করতেন, সেটি আমার কাছে এখনো একটি রহস্য।
জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে এই দেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন শুরু হয়, তখন আনিসুজ্জামান স্যার সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। সেটি ছিল অন্ধকার সময়, যুদ্ধাপরাধের বিচার চাওয়ার অপরাধে প্রফেসর আনিসুজ্জামানসহ ২১ জন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন। স্যারের কাছে শুনেছি ‘অভিযুক্ত আসামি’ হওয়ার কারণে স্যার কানাডা যাওয়ার জন্য ভিসা পাননি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মতো এতো বিশাল একটা ঘটনাকে যখন রাষ্ট্রীয়ভাবে একটা ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে উপস্থাপন করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, তখন আনিসুজ্জামান স্যার তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেরকম অনেক বড় অবদান রেখেছেন, সেটাকে রক্ষা করার জন্যও তার অবদান ছিল অসমান্য। সেরকম একটি ঘটনা খুব কাছ থেকে আমার নিজের চোখে দেখা।
১৯৯৯ সালের কথা। আমাদের শাহাজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর বা ভবনগুলোর কোনো নামকরণ করা হয়নি। একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটা কমিটি করে সেই কমিটিকে ভবনগুলোর নামকরণের দায়িত্ব দেওয়া হলো। আমি সেই কমিটির একজন সদস্য। আমরা সবাই মিলে অনেক চিন্তা-ভাবনা করে এই দেশের বড় বড় মানুষদের নামে হলগুলোর নাম দিয়েছি। মেয়েদের হলের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নামে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার চেয়ে এই দেশের মানুষদের—বিশেষ করে তরুণদের উজ্জীবিত করেছেন বলে তিনি জামাত শিবিরের চক্ষুশূল। কাজেই জামাত শিবির এই নামকরণ বন্ধ করার জন্য ভয়ঙ্কর এক ধরনের সন্ত্রাস শুরু করে দিল, ভয়াবহতার দিক দিয়ে যার কোনো তুলনা নেই। ততোদিনে জামাত এবং বিএনপি’র জোট হয়ে গেছে। কাজেই জামাতের শক্তি বেড়ে গেছে বহুগুণ!
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ঙ্কর একটি অবস্থা। আমার বাসায় বোমা পড়ছে। ছেলেমেয়েরা ছোট, তাদের লেখাপড়া বন্ধ। যদিও নামকরণ করেছে কমিটির সব সদস্য মিলে কিন্তু আক্রোশটা আমার এবং ভাইস চ্যান্সেলরের উপর। মাসের পর মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া, পরীক্ষা সবকিছু বন্ধ, আমি কোনোমতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঢাকায় আছি।
তখন একদিন অগ্রজ হুমায়ুন আহমেদ পত্রিকায় ছোট একটি লেখা লিখেছেন। একটা বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে অবরুদ্ধ সেটা তিনি মেনে নিতে পারছেন না। তাই তিনি ঠিক করেছেন, প্রতিবাদ হিসেবে স্বাধীনতা দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে বসে অনশন করবেন। সঙ্গে সঙ্গে আনিসুজ্জামান স্যার পুরো ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করে আরো একটি অসাধারণ লেখা লিখলেন। কিছু একটা লিখতে গেলে আমরা আবেগে ভেসে যাই, যেটা বলতে চাই সেটা গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারি না, একটা লিখতে গিয়ে অন্য কিছু লিখে ফেলি। আনিসুজ্জামান স্যার-এর লেখা একেবারে ধারালো তরবারির মতো, যুক্তি দিয়ে সকল বিভ্রান্তি কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলেন। যেটা বলতে চান- এতো চমৎকার করে সেটা প্রকাশ করেন যে, পড়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়। (শুধু যে লিখেন, তা নয়- স্যার বলতেও পারেন চমৎকারভাবে। এই দেশের সবচেয়ে বেশি সভা সমিতিতে স্যার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সভা শেষে স্যার সবসময়ই এতো চমৎকারভাবে সভাপতির বক্তব্য রেখেছেন, যেখানে বিন্দুমাত্র বাহুল্য নেই, একটি অপ্রয়োজনীয় শব্দ নেই, অসাধারণ একটি পরিমিতিবোধ, যে সবসময় আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে শুনেছি।)
যাই হোক আনিসুজ্জামান স্যার তার সেই অসাধারণ লেখাটি লিখেই শেষ করলেন না, ঘোষণা দিলেন তিনিও ২০০০ সালের স্বাধীনতা দিবসে সিলেট যাবেন, হুমায়ুন আহমেদ’র সঙ্গে বসে অনশন করবেন। তখন একটা অসাধারণ ঘটনা ঘটলো। সারা দেশ থেকে অসংখ্য মানুষ, সংগঠন, ছেলেমেয়ে, তরুণ-তরুণী, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, কবি ঘোষণা দিতে শুরু করলেন যে, তারাও সেখানে থাকবে।
আমার এখনো মনে আছে, আগের রাতে আমরা ঢাকা থেকে ট্রেনে উঠেছি, বলতে গেলে প্যাসেঞ্জারদের ভেতর প্রায় সবাই অনশনের যাত্রী। বৃহত্তর পরিবারের সব বাচ্চাকাচ্চাও চলে এসেছে, তাদের ভেতর উত্তেজনা। আমাদের সঙ্গে আনিসুজ্জমান স্যার, তার ভেতরে কোনো উত্তেজনা নেই, কোনো চাঞ্চল্য নেই। সারাজীবন কত অসংখ্যবার এ রকম আন্দোলন করছেন, তার কাছে এটা নতুন কিছু না।
নানারকম গুজব, আখাউড়াতে জামাতিরা একত্র হচ্ছে, তারা ট্রেন আক্রমণ করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। (নির্বাচন থামানোর জন্য তারা যেভাবে পেট্রল বোমা ব্যবহার করেছিল, এখন জানি সেই গুজব সহজেই সত্যি হতে পারত!) সারারাত আধা ঘুম আধা জাগরণে পার হলো। সিলেটে পৌঁছে একটা বাসে করে সবাই মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে রওনা দিয়েছি। মাঝপথে জামাতিরা হিংস্র চেহারায় পথ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছেন! ভয়ে-আতঙ্কে বাচ্চাদের মুখ শুকিয়ে গেল। আমাদের সঙ্গে আসাদুজ্জামান নূরও ছিলেন—তিনি সবাইকে অভয় দিলেন। সঙ্গে তখন অনেক পুলিশ, তারা শেষ পর্যন্ত কোনোভাবে বাসটাকে রক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নিয়ে গেল। সেখানে পৌঁছামাত্র আনিসুজ্জামান স্যার বাস থেকে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে হেলান দিয়ে পথে বসে গেলেন। সেই যে বসে গেলেন একটিবারও উঠলেন না। আমার স্ত্রী একবার জিজ্ঞেস করল, “সারাদিন বসে আছেন, বাথরুমে যেতে চাইলে আশপাশে শিক্ষকদের বাসা আছে—” স্যার প্রবল বেগে মাথা নেড়ে বললেন, “উঁহু। এখান থেকে উঠা যাবে না। উঠলেই বলবে খেতে গিয়েছি!”
স্যার এইসব আন্দোলনের বিশেষজ্ঞ, তার যুক্তি ফেলে দেওয়ার মতো নয়! এরকম কত স্মৃতি—জাতীয় স্মৃতি, রাষ্ট্রীয় স্মৃতি, পারিবারিক স্মৃতি, ব্যক্তিগত স্মৃতি। বড় ভাই হুমায়ুন আহমেদ আমাদের গ্রামে স্কুল তৈরি করবেন, সেখানেও স্যারকে ধরে নিয়ে গেলেন। যেকোনো বড় কাজে, মহৎ কাজে স্যারের হাতের স্পর্শ না থাকলে মনে হয় কাজটাই বুঝি সম্পূর্ণ হলো না। সেই স্যার আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন। এমন একটি দুঃসময়ে স্যার এমনভাবে গিয়েছেন যে, আমরা ঠিক করে স্যারকে বিদায় পর্যন্ত দিতে পারলাম না। বুকের ভিতর এক ধরনের শূন্যতা, শুধু মনে হচ্ছে, এখন আমরা কার মুখের দিকে তাকাবো? কে আমাদের পথ দেখাবেন? প্রিয় স্যার, আপনাকে কখনো মুখ ফুটে বলতে পারিনি—কিন্তু আমাদের সবার বুকের ভেতর ভালোবাসার ছোট ঘরটিতে আপনি সবসময় থাকবেন। সেখান থেকে কেউ আপনাকে কখনো কেড়ে নিতে পারবে না।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ