উপকূলজুড়ে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। আশঙ্কা করা হচ্ছে এটি ১০ ফুটেরও বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আকার ধারণ করতে পারে। এর থেকে বাঁচতে সারাদেশের মতো লক্ষ্মীপুরেও উপকূল থেকে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হচ্ছে।
মেঘনা উপকূলীয় এ জেলার অন্তত ১০ হাজার মানুষকে আশ্রয়য়েকেন্দ্র আনা হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা রামগতিতে আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছে অন্তত ৮ হাজার মানুষ। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে সবাই গাদাগাদি অবস্থায় রয়েছেন। এতে আম্ফান থেকে বাঁচতে গিয়ে উপকূলে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বুধবার বিকেলে রামগতি উপজেলার মধ্য চরআলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে শত শত মানুষকে গাদাগাদি অবস্থায় থাকতে দেখা যায়। কেউই মানছেন না সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি। দুই-একজনের মুখে মাস্ক থাকলেও গায়ে গা লাগিয়ে অবস্থান করছেন তারা।
সূত্র জানায়, আম্ফান উপলক্ষে জেলায় ২০০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু এটি বিশাল জনপদের জন্য খুবই কম। এজন্য আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের ভিড় বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি এলাকার স্কুল-কলেজ উপকূলের মানুষের আশ্রয়ের জন্য প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশ্রয় কেন্দ্রে আসা কেউই সামাজিক দূরত্ব মানছে না। তাদেরকে সামাজিক দূরত্বে রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। সতর্ক অবস্থায় থাকলেও তাদেরকে এই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন, চরআলগী নদী কেন্দ্রীক এলাকা। এজন্য আশ্রয়কেন্দ্রটিতে মানুষ বেশি এসেছে। তাদেরকে সামাজিক দূরত্বে রাখার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বলে দিয়েছি।
তিনি আরও জানান, নিয়মিত হাত পরিষ্কারের জন্য সাবানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অসহায় মানুষগুলোর খাবার নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেয়া আছে। ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীদেরকেও আশ্রয় নেয়া মানুষগুলোকে সামাজিক দূরত্বে রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন আবদুল গাফ্ফার বলেন, একপাড়ার মানুষ অন্যপাড়ায় যেতে চায় না। ঠিক তেমনি আম্ফানের ঝুঁকিতেও এক এলাকার মানুষ এসে একই আশ্রয়কেন্দ্রে জড়ো হয়। তবে তাদেরকে যতটুকু সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী রাখা প্রয়োজন। নতুবা আম্ফান থেকে বাঁচতে গিয়ে, করোনার ভয়াবহতায় ভুগবে উপকূল।
তিনি আরও জানান, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ৬৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এরসঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স ও ওষুধ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়েও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো সংকট মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগ সবসময় সতর্ক অবস্থায় আছে।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুরে এখনও পর্যন্ত চিকিৎসক, সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিসহ ১১০ জন রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।এরমধ্যে ৩৮ জন সুস্থ হয়েছেন।