গতি কমে আম্ফান এখন ‘নিম্নচাপ’

মত ও পথ প্রতিবেদক

আম্ফান এখন 'নিম্নচাপ'

সারারাত তাণ্ডবের পর গতি কমে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান । আম্ফানের বাতাসের গতিবেগ এখন ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। দেশের দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চল পারি দিয়ে এটি এখন স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে উত্তরদিকে (রাজশাহী অঞ্চল) সরেছে। আম্ফান ধীরে ধীরে আরও শক্তি হারাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে এর প্রভাবে আজ সারাদেশেই ঝড়-বৃষ্টির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ৬০ থেকৈ ৮০ কিলোমিটার বেগেও ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে।

বৃহস্পতিবার সকালে এসব তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ২ নম্বর নৌ- হুঁশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এছাড়া দেশের অন্যত্র দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের আধিক্য বিরাজ করছে। সাগর এখন উত্তাল। এ কারণে মহাবিপদ সংকেত নামলেও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এদিকে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ/দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। যা অস্থায়ীভাবে দমকা আকারে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার অথবা তার চেয়ে বেশি বেগে প্রবাহিত হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

গতকাল রাতে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। আম্ফানের প্রভাবে দেশের পাঁচ জেলায় ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ধারণার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা ঘণ্টা চারেকের তুমুল ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের উপকূল এলাকা।

আনন্দবাজার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সেখানে ১০-১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে আসল ক্ষয়ক্ষতি ও প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা জানা যায়নি। বহু গ্রাম তলিয়ে গিয়েছে, শত শত গাছ উপড়ে গিয়েছে এবং ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা জানান, আম্ফানের মূল অংশ অর্থাৎ কেন্দ্র ভারতের মধ্য দিয়েই যাওয়ার কারণেই প্রথম দিকের ঝড়ের যে তীব্র গতি সেই ধাক্কা বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যায়নি।। কিন্তু এর ব্যাস বড় হওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গের একেবারে কাছাকাছি খুলনা, সাতক্ষীরা অঞ্চলে প্রথমে ঝড়ের তীব্রতা দেখা যায়। একইসঙ্গে প্রায় সারা দেশের ওপর দিকে দমকা হাওয়া এবং বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর রাত যত বাড়তে থাকে, আম্পান উপকূল থেকে তত ওপরে স্থলভাগের দিকে উঠতে থাকে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে