বাংলাদেশের পক্ষে আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়। তাই নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে জায়গা দিতে হলে পশ্চিমা দেশগুলোকে তাদের দেশে নিয়ে জায়গা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় ইউরোপের ঢাকাস্থ এক দূতকে ইঙ্গিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি এই আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, আমাদের পক্ষে আর বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়। যারা বিশ্বে বড় বড় মাতব্বর, যারা সব সময় আমাদের উপদেশ দেন, তারা কিছু রোহিঙ্গা নিতে পারেন। তবে তারা নেন না। বরং আরও নতুন করে রোহিঙ্গাদের নিতে আমাদের অনুরোধ করেন।
ভিডিও বার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকাস্থ ইউরোপের এক দূতকে ইঙ্গিত করে বলেন, সেদিন ইউরোপের একজন রাষ্ট্রদূত আমার কাছে এসেছিলেন। আমি বললাম, আমার দেশের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার, আর আপনার দেশের মাথাপিছু আয় ৫৬ হাজার ডলার। আমার দেশে প্রতি বর্গমাইলে ১২০০ লোক থাকেন, আর আপনার দেশে প্রতি বর্গমাইলে ১৫ জন লোক থাকেন। আপনারা কিছু রোহিঙ্গা নিয়ে যান। আমাদের কোনো আপত্তি নেই।
মূলত সাম্প্রতিক সময়ে সাগরে ভাসা থেকে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিতে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর অনুরোধ ও চাপ সামলাতে হয়। কিন্তু শেষ পযন্ত অনেকাটা জোর করেই ঢাকাকে তাদের আশ্রয়ে বাধ্য করা হয়। যদিও ঢাকার পক্ষে এসব রোহিঙ্গাকে নেয়ার বিষয়ে কোনো আগ্রহই ছিল না। বর্তমানে সেসব রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থান দেয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ভাসানচরের সেসব রোহিঙ্গাকে রাখা হয়েছে তাদের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে আসার জন্যও সরকারকে চাপ দেয়া হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোকে উদ্দেশে করে মোমেন বলেন, আপনার যদি এত দরদ থাকে, ওদেরকে বেটার লাইফ দেবেন, নিয়ে যান আপনার দেশে। অসুবিধা কী? আমরা কাউকে আটকাব না। রিলোকেট দেম। যেকোনো দেশে নিয়ে যান।
সাগরে ভাসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঝামেলা হয় আন্দামান সাগরে, ভারত মহাসাগরে। যখনই ঝামেলা হয় তখনই সবাই শুধু বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভাবখানা এমন, যেহেতু আমরা আগে ১১ লাখ আশ্রয় দিয়েছি, বাকিগুলোকেও দেন। রোহিঙ্গা সমস্যা দুনিয়ার যেখানে হবে, তাদের আপনারা সাহায্য দেন।
মোমেন বলেন, আমরা বলেছি যে, আমরা পারব না। আমাদের আর কোনো জায়গা নেই। আর অন্যদেরও রেসপনসিবিলিটি আছে। আর রোহিঙ্গা আমাদের একার সমস্যা নয়, এটা বিশ্বের সমস্যা।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ অন্যান্য দেশগুলো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে পারে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, অনেক বড় বড় মাতাব্বর আছে। তারা আমাদের সারা বছর উপদেশ দেন, আদেশ করেন। তারা নিতে পারেন, তাদের জায়গার কোনো অভাব নেই। কিন্তু তারা তা করছে না।