মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম ব্যবস্থাপক আশরাফ আলী (৬০) মারা গেছেন। বুধবার দিবাগত (২৭ মে) রাতে রাজধানীর উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
হাসপাতালের কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ ও পিআরও তারিক শিবলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ কর্মকর্তা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি ছিলেন।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে এই প্রথম বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা মারা গেলেন। এর আগে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৭ জন ব্যাংকার মারা যান। এছাড়া একজন ব্যাংক পরিচালকও করোনায় মারা গেছেন। পাশাপাশি প্রায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ জন ব্যাংকার প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। বিভিন্ন ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
যেসব ব্যাংকার করোনায় মারা গেছেন তারা হলেন- সিটি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের মুজতবা শাহরিয়ার, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার (পিও) মাহবুব এলাহী, রূপালী ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সহিদুল ইসলাম খান, এনসিসি ব্যাংকের চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জামশেদ হায়দার চৌধুরী, উত্তরা ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার কর্মকর্তা ওয়াহিদ মর্তুজা, জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিসের অ্যাডমিন শাখার এক্সিকিউটিভ অফিসার হাসিবুর রহমান এবং সিটি ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু সাঈদ। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দেশের অন্যতম শিল্পপতি এস আলম গ্রুপ ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পরিচালক মোরশেদ আলম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মহামারি করোনাভাইরাসে প্রায় ৬০ জন ব্যাংকার আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ৩০ কর্মকর্তা। এরপরই রয়েছে বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের ১০ জন। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের ৩ জন, রূপালী ব্যাংকের ৩ জন , সাউথইস্ট ব্যাংকের ৩ জন, সিটি ব্যাংকের ২ জন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ২ জন, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ১ জন ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১ জন।
এছাড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালক। এর মধ্যে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ রয়েছেন। তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও পরিচালক সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী।
জানা গেছে, গত ২১ মে ভোরে জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিসের কর্মকর্তা হাসিবুর রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মার যান। এর আগে গত ১৭ মে রাতে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার (পিও) মাহবুব এলাহী কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে মারা যান। ১৫ মে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সহিদুল ইসলাম খান রাজধানীর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এর আগে দ্য সিটি ব্যাংকের আরও দুজন মারা যান। তাদের মধ্যে গত ১২ মে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবু সাঈদ নামের এক কর্মকর্তার মৃত্যু হয়। তিনি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সেন্ট্রাল ক্লিয়ারিং বিভাগের অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার আগে ২৬ এপ্রিল ব্যাংকটির মানবসম্পদ বিভাগের মুজতবা শাহরিয়ার নামের এক কর্মকর্তা মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর বাইরে করোনা লক্ষণ নিয়ে চট্টগ্রামের আরও ২ ব্যাংক কর্মকর্তা মারা গেছেন বলে জানা গেছে।