করোনা: অফিস-গণপরিবহন খুললেও চলাচলে ‘নিষেধাজ্ঞা’ উঠছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে গণপরিবহন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও বাড়িয়েছে সরকার। তবে এতদিন গণপরিবহন, নৌযান, রেল চলাচল বন্ধ থাকলেও তা ৩১ মে থেকে তা সীমিত আকারে চলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জনগণ এবং সব কর্তৃপক্ষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার শর্ত দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত আদেশ দিয়েছে।

আদেশ বলা হয়, আগামী ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। এছাড়া সাপ্তাহিক ছুটি দিনগুলোও এর আওতায় থাকবে। এর আগে বুধবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, ৩০ মের পর সাধারণ ছুটি আর বাড়বে না। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত আকারে খোলা থাকবে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় জনসাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। প্রতিটি জেলায় ঢোকা এবং বাহিরের পথে চেকপোস্ট থাকবে। জেলাপ্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এ নিয়ন্ত্রণ সর্তকভাবে বাস্তবায়ন করবে বলে আদেশ বলা হয়।

এতে আরও বলা হয়, এসব নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জনগণকে অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে। আগের মতো রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে যেতে পারবে না। তবে প্রয়োজনীয় বেচাকেনা, কর্মস্থলে যাতায়া, ওষুধ কেনা, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি কাজ করা যাবে। সব সময়ই বাইরে চলাচলের সময় মাস্ক পরতে হবে। মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। এই নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া হাট-বাজার দোকানপাট ও বেচাকেনার সময় পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে। শপিংমলে প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা সহজ স্যানিটাইজার ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিংমলে যাওয়া যানবাহনগুলো জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাট-বাজার, দোকানপাট এবং শপিংমল বিকাল ৪ টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।

আদেশে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাজে নিয়োজিত সংস্থা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন- ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলো (স্থল বন্দর,নদীবন্দর এবং সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অনান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবা সঙ্গে অফিসগুলো, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না।

এছাড়া সড়ক ও নৌপথে সব ধরনের পণ্য পরিবহন কাজে নিয়োজিত যানবাহন (ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল) চলাচল করতে পারবে। কৃষি পণ্য, সার, বীজ, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্প পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসব কাজে নিয়োজিত কর্মীরা এই নিষেধের বাইরে থাকবেন।

আদেশে আরও বলা হয়, চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যম (ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া) এবং ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কে নিয়োজিত কর্মীদের বেলাতেও এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে না।

এছাড়া ওষুধশিল্প, কৃষি ও উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা, রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খেলা রাখা যাবে। তবে তাদের জন্য নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

এই সময়ের মধ্যে কোনো ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না। তবে অনলাইন কোর্স বা ডিস্টেন্স লার্নিং চালু রাখা যাবে।

ব্যাংক চলবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অনুযায়ী।

সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলো নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী ও সন্তান সম্ভবা নারীদের কর্মস্থলে আসতে বারণ করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না। সীমিত পরিসরে নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্য সম্মত বিধি নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে। তবে সব সময়ই মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জারি করা নিদের্শনা কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।

তবে আগের মতোই কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ, গণ জমায়েত ও অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে জামাত আদায় এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা করা যাবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে