আট মাসে ৯২ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতি

মত ও পথ প্রতিবেদক

বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছেই
ফাইল ছবি

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) দেশের পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার কোটি ৭৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা। বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশের অবস্থাও ঋণাত্মক রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানি আয় কমায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। বছরের শুরু থেকে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সৃষ্ট পরিস্থিতিতে লকডাউনে স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ। অচল হয়ে পড়ছে বিশ্ব বাণিজ্য। এতে নেতিবাচক ধারায় থাকা দেশের রফতানি আয় ফেব্রুয়ারির পর ব্যাপক হারে কমেছে।

universel cardiac hospital

অন্যদিকে অর্থনীতির চাঙ্গা রাখার প্রধান সূচক রেমিট্যান্স আয়ও চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিলে কমে গেছে। এসব কারণে বাণিজ্য বড় ক্ষতির মধ্যে পড়ছে বাংলাদেশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে দুই হাজার ৫৫৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে তিন হাজার ৬৩৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারি শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৫ টাকা ধরে) দাঁড়ায় ৯১ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। ঘাটতির এ অঙ্ক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় ছিল এক হাজার ৯৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

আলোচিত সময়ে আমদানি কমেছে ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। রফতানি কমেছে ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তবে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২০ দশমিক ০৭ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকলেও সেপ্টেম্বর থেকে তা ঋণাত্মক হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু গত কয়েক বছর উদ্বৃত্তের ধারা অব্যাহত থাকলেও গেল অর্থবছরে ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। ফেব্রুয়ারিতেও এ ধারা অব্যাহত রযেছে।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি শেষে চলতি হিসাবে ১৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল ৩৯৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।

তবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে প্রথম আট মাসে সামগ্রিক লেনদেনে বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ২১ কোটি ৪০ লাখ ডলারে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে সামগ্রিক লেনদেনে ৪৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার ঘাটতি ছিল।

আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বিদেশিদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে ৭৪২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে মাত্র ৪৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ হিসাবে আট মাসে সেবায় বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫৮ কোটি ২০ লাখ ডলারে। যা গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২০৬ কোটি ডলার।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৩৩০ কোটি ডলার, এর মধ্যে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ১৭১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরের চেয়ে এফডিআই কমেছে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ ও নিট কমেছে ৭ দশমকি ৩৫শতাংশ।

এদিকে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গত বছরের তুলনায় অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। আলোচিত সময়ে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মাত্র ৫ কো‌টি ৮০ লাখ ডলার, যা তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে