চীনের উহান থেকে ছড়ানো প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনার কারণে টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে আজ সীমিত আকারে খুলছে দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস।
নতুন রোগীর পাশাপাশি প্রাণসংহারি ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা যখন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সেই পরিস্থিতিতে খুলে দেওয়া হচ্ছে অফিস। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও চলবে পুরোদমে। এমনকি সীমিত পরিসরে চলবে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান, ট্রেন ও বিমানও।
করোনা সংক্রমণের দিক থেকে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে এভাবে সব খোলার সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী মনে করছেন সংশ্নিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। আপত্তি এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকেও। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অর্থনীতি সচলের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এসব খোলা হবে। ১৫ জুন পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তবে ততদিনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অবস্থায় থাকবে কি-না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। কেননা, দেশে ‘লকডাউন’ও ঠিকভাবে করা যায়নি, যে কারণে ভাইরাস এখন ৬৪ জেলায়ই ছড়িয়ে পড়েছে।
করোনা প্রাদুর্ভাব এড়াতে গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় সাধারণ ছুটি। দফায় দফায় তা বাড়িয়ে সর্বশেষ গত ১৯ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর শর্তসাপেক্ষে আজ থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এই সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণের পাশাপাশি সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরে অফিসে আসতে বলা হয়েছে। তবে বয়স্ক, অসুস্থ ও সন্তান-সম্ভবাদের এ সময় অফিসে আসা মানা।
সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হলেও রবিবার থেকে যারা অফিস করবেন তাদের অনেকের মধ্যেই প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে সংক্রমণের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, এখন দেশে করোনার প্রকোপ তুঙ্গে। এমন অবস্থায় অফিসে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হই কিনা তা নিয়ে ভয়ে আছি। আমাদের নির্দেশনার কথা বলা হলেও বাস্তবে কয়জন নির্দেশনা মেনে চলবেন তা নিয়ে দেখা দিয়ে সংশয়।
জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা না এলে চরম মূল্য দেয়া লাগতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরাও। লকডাউন সঠিকভাবে কার্যকর না হওয়ায় সারাদেশে সামাজিক সংক্রমণ ঘটায় জুন মাসে দেশে করোনায় ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করেছে ডক্টরস প্লাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ। তারা মনে করছেন, সবকিছু খুলে দেয়ার ফলে নিয়ন্ত্রণহীন পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির প্রকোপ।
করোনার বিস্তার ঠেকাতে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের অনেক নিয়মনীতিই তোয়াক্কা করা হয়নি বলে মনে করেন প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী লেলিন।
মত ও পথকে তিনি বলেন, প্রতিদিনই কোভিড-১৯ আক্রান্তের হার বৃদ্ধির মধ্যে ছুটি বা লকডাউন শিথিল করে দেয়ায় সংক্রমণের গতি আরও ঊর্ধ্বমুখি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের নিয়মনীতিগুলো কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
এদিকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে রবিবার থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে প্রশাসন। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় সহায়তা দেয়ার জন্য সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সবকিছু মিলিয়ে অচলাবস্থা কাটতে যাওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছে দেশবাসী। অপরদিকে পরিস্থিতি আরও কতটা মারাত্মক হয় সেটা নিয়ে রয়েছে চরম শঙ্কা। এই অবস্থায় সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।