দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে স্থগিত হওয়ার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনসহ বেশ কয়েকটি সংসদীয় নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আজ বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে বিকাল ৩টায় এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দুই মাস ছুটির পর ইসির ৬৩তম সভাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এদিকে ২৯ মার্চ নির্বাচনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে গত ২১ মার্চ ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় চসিক নির্বাচনটির ভবিষ্যতই এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে আগামী ৮ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন না হলে সে ক্ষেত্রে নতুন তফসিল ঘোষণা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।
চসিক নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল মতে, ২৯ মার্চ নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র যাচাইবাছাই শেষে ৯ মার্চ প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটের মাঠে ছিলেন প্রার্থীরা। মেয়র নির্বাচনে ভোটের মাঠে রয়েছে মেয়র পদে সাতজন। কাউন্সিলর পদে ১৬৩ জন এবং মহিলা কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলবল নিয়ে প্রচার-প্রচারণা প্রচুর লোকের সমাগম হয়ে আসছিল। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে গত ২১ মার্চ চসিক নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
তবে ২১ মার্চ যেসময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত করা হয় সে সময় চট্টগ্রামে কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। চট্টগ্রামে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৩ এপ্রিল। আর গত একমাসে চট্টগ্রাম মহানগর হয়ে উঠেছে করোনাভাইরাসের হটস্পট।
গতকাল রবিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় মোট ২৯৮৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরেই করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৩১২ জন। এর বাইরে করোনা উপসর্গ নিয়ে সামাজিক সংক্রমণের অপেক্ষায় আরো কয়েক হাজার রোগী।
৩১ মে থেকে দেশব্যাপী লকডাউন উঠে যাওয়ায় সংক্রমণের আশঙ্কা আরো বেড়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ৮ আগস্টের মধ্যে চট্টগ্রামের করোনা পরিস্থিতি উন্নতির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ এর ৩৮(১) এর ‘ক’ ধারায় আছে, করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আইনের ৬ নম্বর ধারায় রয়েছে, প্রথম সভা থেকে সেই মেয়াদ হবে ৫ বছর। সেই হিসাবে আগামী ৮ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫ বছর পূর্ণ হবে।
আজকের ইসির বৈঠকে চসিক নির্বাচনসহ স্থগিত হওয়া সংসদীয় উপনির্বাচন নিয়ে আলোচন হবে নিশ্চিত করে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, স্থগিত নর্বাচনসহ বেশ কিছু আইনি বিষয় নিয়েও আজকে আলোচনা হবে।
আগস্টের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে আগস্ট আসুক তারপর নাহয় সেটার সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এদিকে নির্বাচন স্থগিতের মধ্যেই ইতিমধ্যে ১ জন কাউন্সিলর, ১ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী করোনায়া আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই তিন ওয়ার্ডে নতুন করে তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর আহম্মদ খান মত ও পথকে বলেন, আমরা সাধারণত আগস্ট মাসে নির্বাচন করি না। সে ক্ষেত্রে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। অন্যথায় আইন অনুযায়ী নতুন তফসিল ঘোষণা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণার সময়ই বলে দেওয়া হবে বর্তমান বৈধ প্রার্থীরা থাকবে না নতুন করে আবেদন করতে হবে। নতুন আবেদন করতে হলে তখন জামানতের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলে বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলরদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয় সরকার আইনে। সিটি করপোরেশন আইন-২০০৯ এর ২৫(১)-এ উল্লেখ রয়েছে ‘নতুন সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হইলে অথবা কোনো সিটি করপোরেশন বিভক্ত করা হইলে অথবা কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়াদোত্তীর্ণ হইলে, সরকার সিটি করপোরেশন গঠিত না হওয়া পর্যপ্ত উহার কার্যাবলী সম্পাদনের উদ্দেশ্যে একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করিতে পারিবে।
তবে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয় বলে জানান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান।