ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জানিয়েছেন, করপোরেশনের যেকোনো কার্যক্রম পরিদর্শনে তিনি যেকোনো সময় উপস্থিত হতে পারেন। এ সময় দায়িত্বরত কাউকে অনুপস্থিত পাওয়া গেলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হবে বলে জানান তিনি।
আজ সোমবার নগর ভবন সেমিনার কক্ষে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সভাপতিত্বে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র বলেন, ‘আমি ২৪ ঘন্টার মেয়র। যে কোনো সময় যে কোন কার্যক্রম পরিদর্শনে যাব। সে সময় স্পটে কাউকে পাওয়া না গেলে ধরে নেবেন তিনি আর ডিএসসিসিতে কর্মরত নেই। সেটা তিনি যে পর্যায়ের কর্মকর্তাই হোন।‘
গৎবাঁধা পুরনো লোকদেখানো কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে এসে মাইন্ডসেট পরিবর্তন করে অর্জিত মেধা দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নগরবাসীর সেবাদানে আন্তরিকভাবে কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র তাপস।
তিনি বলেন, ‘এজন্য তৃণমূল থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত মশক নিয়ন্ত্রণের পুরো কার্যক্রম ঢেলে সাজানো হবে।‘
মশক নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তৈরিকৃত বিশদ কর্মপরিকল্পনা শুরু করার কথা তুলে ধরে মেয়র তাপস বলেন, ‘মশক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যেসব কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরা হলো তার সঠিক বাস্তবায়নে কোন ব্যত্যয় বা অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না।‘
তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি গঠন করে দেয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এ কমিটি মাঠ পর্যায়ে প্রাপ্ত কার্যক্রমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উপযুক্ত কার্যক্রম গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়ন করবেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের পরামর্শ নেবেন। ৭ জুন থেকে এ কার্যক্রম শুরু হবে।‘
মেয়র তাপস বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত মশক কর্মীরা এসব কাজ আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করবেন। মনিটরিংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিতরা তা সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন।‘
তিনি বলেন, ‘লার্ভিসাইডিং কাজটি সঠিকভাবে করা গেলে মশক নিয়ন্ত্রণের অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়ে যায় যদিও এটা লোকচক্ষুর অগোচরে হয়ে থাকে তাই নাগরিকদের মধ্যে এর প্রভাব কম। তবে ফগিং করার সময় শব্দ শুনে নাগরিকরা বুঝতে পারেন যে সিটি করপোরেশন কাজ করছে।‘
১৪ জুন থেকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার জলাশয়, লেক, খাল শনাক্ত করে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো শুরু হবে। একই সঙ্গে নর্দমা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমও চালানো হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘ডিএসসিসি এলাকাধীন এসবের মালিক সিটি করপোরেশন। তাই নগরবাসীর কল্যাণে প্রয়োজনুযায়ী কার্যক্রম, পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো সংস্থা কি করবে বা করলো তা দেখা হবে না। আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করবো। প্রয়োজনে ঐসব সংস্থা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।‘
উপস্থাপিত এসব কর্মপরিকল্পনা জ্ঞান, মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সঠিকভাবে কর্মকর্তাগণ বাস্তবায়ন করলে নগরবাসীর জন্য নতুন আঙ্গিকে নব যুগের সূচনা হবে- যা করপোরেশনের ইতিহাসে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কর্ম পরিকল্পনা মধ্যে রয়েছে জীবজ নিয়ন্ত্রণ (খোলা জলাশয় ব্যবস্থাপনা) এর আওতায় করপোরেশনের ১০টি অঞ্চলের জলাশয়ের কচুরীপানা, আবর্জনা পরিষ্কারকরণ।
প্রতিবিঘা জলাশয়ে আনুমানিক তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার তেলাপিয়া এবং ২৫টি হাঁস চাষকরণ। জলাশয়ে নিয়মিত জাল চালনা করা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাধ্যমে সকল নর্দমা পরিষ্কার করণ।
রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের আওতায় প্রতিদিন প্রতি ওয়ার্ডে ৮ জন মশককর্মীর মাধ্যমে সকাল ৯ টা হতে ১টা পর্যন্ত লার্ভিসাইডিং এবং প্রতিদিন প্রতি ওয়ার্ডে ১০ জন মশক কর্মীর মাধ্যমে দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত ফগিং কার্যক্রম চালানো।
সোর্স রিডাকশন কার্যক্রমের আওতায় অনলাইন এ নগরবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতি ওয়ার্ডে ৩ জন মশক কর্মীর মাধ্যমে নাগরিকদের বাসা, কর্মস্হল প্রাঙ্গণে এডিসের প্রজননস্হল ধ্বংশ কার্যক্রম ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা কার্যক্রম ইত্যাদি ।
সভায় অন্যদের মধ্যে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ মো: ইমদাদুল হক, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফ আহমেদ, প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা এয়ার কমোডোর আবদুল বাতেন, সচিব মো. আকরামুজ্জামানসহ আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, এন্টোমোলজিস্টরা উপস্থিত ছিলেন ।