পুলিশ হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর জের ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ সহিংসতা চলছেই। প্রথমদিকে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকলেও ধীরে ধীরে তা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে।
বিক্ষোভকারী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে ইতোমধ্যে কারফিউ জারি করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের রুখতে টিয়ার গ্যাস এবং রাবার বুলেট ছুড়েছে দাঙ্গা পুলিশ। কয়েকটি শহরে পুলিশের যানে আগুন দেয়া হয়েছে। শুক্রবার বিক্ষোভের সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের ভেতরের বাঙ্কারে লুকিয়েছিলেন বলে সিএনএন-র খবরে বলা হয়েছে।
খবরে বলা হয় শুক্রবার রাতে যখন হোয়াইট হাউসের বাইরে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়েছিল সে সময়ই নিরাপত্তার কথা ভেবে ট্রাম্পকে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে সরিয়ে নেওয়া হয়। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বলে সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বাঙ্কারে তাকে বেশিক্ষণ রাখা হয়নি। সেখানে তিনি ঘণ্টাখানেকের জন্য ছিলেন।
ট্রাম্পের বাঙ্কারে থাকার সময়ে সেখানে সম্পৃক্ত বেশ কিছু সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ছাড়াও মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প এবং তাদের ছেলে ব্যারনকেও বাঙ্কারে নেওয়া হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বাঙ্কারে নেওয়ার ঘটনা প্রথম প্রকাশ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
এদিকে ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন যে, ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউসার হোয়াইট হাউসের আশেপাশে বিক্ষোভ সামলানোর জন্য নগর পুলিশকে দায়িত্ব নেওয়ার অনুমতি দেননি। তবে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা বলছেন, ওয়াশিংটন পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকদিনের বিক্ষোভের সূত্রপাত কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করেই। তার এমন নির্মম মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না মার্কিনিরা। শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ-নির্বিশেষে সব শ্রেণিগোষ্ঠীর মানুষ এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে লকডাউন, কারফিউকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ব্যাপক-জ্বালাও পোড়াও শুরু করেছেন।
গত সোমবার মিনেয়াপোলিসে পুলিশের হেফাজতে থাকার সময় মারা যান ৪৬ বছর বয়সী আফ্রিকান আমেরিকান নাগরিক ফ্লয়েড। ৪৪ বছর বয়সী শ্বেতাঙ্গ সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চউভিনকে তার মৃত্যুর জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং সোমবার তাকে আদালতে তোলার কথা রয়েছে। ওই সময়ে উপস্থিত থাকা আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
অনলাইনে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় যে, বেশ কয়েক মিনিট ধরে ফ্লয়েডের ঘাড়ের ওপর হাঁটু গেড়ে বসে রয়েছেন চউভিন। সেসময় ফ্লয়েড বারবারই বলছিলেন যে তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না।
ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৩০ শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শিকাগোতে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে বিক্ষোভকারীরা। জবাবে পুলিশও পাল্টা টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। আটক করা হয় বেশ কয়েকজনকে।
লস এঞ্জেলেসে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়ার পর বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ছোঁড়ে পুলিশ। ছবিতে দেখা যায় যে, পুলিশের গাড়ির উপর দাড়িয়ে রয়েছে বিক্ষোভকারীরা। দ্বিতীয় দিনের মতো ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের বাইরে অবস্থান নিয়েছে অনেক বিক্ষোভকারী।
জর্জিয়া, আটলান্টায় শুক্রবার বিক্ষোভকারীরা ভাংচুর চালানোর পর জান-মালের নিরাপত্তায় সেখানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। মিনেয়াপোলিস, নিউইয়র্ক, মায়ামি, আটলান্টা এবং ফিলাডেলফিয়ায় বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ।
অন্যান্য শহরের সাথে মিনেয়াপোলিস, আটলান্টা, লস এঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া, পোর্টল্যান্ড এবং লুইসভিলে রাতভর কারফিউ জারি করা হয়েছে। অনেক শহরে বিক্ষোভকারীরা কারফিউ ভেঙ্গে ব্যাপক হারে সহিংসতা চালিয়েছে।
মিনেসোটা রাজ্যের আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের ‘অনুপ্রবেশ’ ঘটেছে বলে মনে করছেন তারা। পুলিশ এই ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ বিষয়ে বিশেষভাবে নজর রাখছে।
ডেনভারে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী মাটিতে উপর হয়ে শুয়ে ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশ ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু চাপা দিয়ে রাখার এক পর্যায়ে ফ্লয়েড বলেছিলেন, ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’। এর কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।
আটলান্টা, বোস্টন, মিয়ামি এবং ওকলাহোমা শহরেও বড় আকারে বিক্ষোভ হয়েছে। আটলান্টায় রবিবার বিক্ষোভরত দুই কলেজ শিক্ষার্থীর ওপর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছে চীন। সাম্প্রতিক সময়ে হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থিদের অনুরূপ সহিংস বিক্ষোভে ইমেজ সংকটে পড়েছিল চীন। ট্রাম্প প্রশাসন তখন হংকংয়ের চীনবিরোধী গণতন্ত্রপন্থিদের প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারীদের সমর্থন দিতে শুরু করেছেন চীনের সরকারি কয়েকজন কর্মকর্তা এবং কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম।