হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ এবং প্রত্যেক জেলা হাসপাতালে স্বয়ংসম্পূর্ণ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) দ্রুত নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিষয়টি জানান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘তার (প্রধানমন্ত্রী) আলোচনায় আজকে যেটা এসেছে, আইসিইউ ইউনিট ও অক্সিজেন সরবরাহ স্থিতিশীল ও পর্যাপ্ত করার জন্য। ভেন্টিলেটরও দিতে হবে যেখানে প্রয়োজন।
একনেক সভায় মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এর মধ্যে করোনা মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী দুটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিলেন। আজকের সভায় সেই দুটি প্রকল্পেরও আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়া হলো। প্রকল্প দুটির মধ্যে ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড পেন্ডামিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্পটিতে মোট খরচ হবে এক হাজার ১২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। তার মধ্যে বিশ্বব্যাংক ঋণ হিসাবে দেবে ৮৫০ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকার দেবে ২৭৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স’ প্রকল্পে খরচ হবে এক হাজার ৩৬৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। তার মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ঋণ হিসাবে দেবে ৮৪৯ কোটি ৯৭ লাখ এবং বাংলাদেশ সরকার দেবে ৫১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন যে, স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক ব্যয়ের প্রস্তাব আছে দুটি প্রকল্পের মধ্যে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) উচ্চতর অগ্রাধিকার দিয়েছেন জেলা হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালে শুধু আইসিইউ স্থাপন নয়, এটাকে ইকুইপ করতে হবে। একটা আইসিইউতে যেসব যন্ত্রপাতি থাকার কথা, সেগুলো সরবরাহ করতে হবে। অতি জরুরিভিত্তিতে এগুলোকে আপডেট করতে হবে।’
অক্সিজেনের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে। তিনি চান এটা যেন আরও বৃদ্ধি পায়। হাই ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাইয়ে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। এটা দিতে হবে বেশি করে। এই যে দুটি প্রকল্প পাস করলাম, তার (প্রধানমন্ত্রীর) ধারণা যে, এখানে যে ব্যয় করা হবে, ব্যয়গুলো এসব বিবেচনায় নিয়ে যেন করা হয়। এসব কাজ তার (প্রধানমন্ত্রী) মতে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
নিজের মত তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এছাড়া বিভিন্নজন বিভিন্ন আলোচনা করেছেন। মনিটরিং করতে হবে, যন্ত্রপাতি কিনে অনেক সময় ব্যবহার করে না– এগুলো বর্জন করা দরকার। এগুলো আমাদের চলমান সমস্যা। আমি দেখে এসেছি। আমি অস্বীকার করি না। এটা কমিয়ে আনার জন্য, সকলকে সচেতন হওয়ার জন্য বারবার আবেদন এসেছে। আজকেও আবেদন এসেছে। সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন, স্বাস্থ্য সচিব ছিলেন।’
এ সময় এক সংবাদকর্মী প্রশ্ন করেন, করোনা সংক্রমণের পর আমরা স্বাস্থ্য খাতের যে ভঙ্গুরতা দেখতে পেলাম। কেউ কি আলোচনা করেছে, স্বাস্থ্য খাতের কেন এমন অবস্থা হলো?
জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সবাই স্বীকার করেন, আমরাও স্বীকার করি যে, অন্যান্য খাতের মতো আমাদের স্বাস্থ্য খাতেও অনেক ঘাটতি আছে। এটা লুকিয়ে রাখার কোনো বিষয় নয়। এটাকে আপডেট করা খুবই দরকার। তবে স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যদি ঘাটতি থাকে, এটার ভয়ঙ্কর পরিণত হয়। জীবন-মরণের প্রশ্ন। এ জন্য করোনার মধ্যেও আমরা নিয়মিত মিটিং না করে স্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দুটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছি। সুতরাং যারা সরকার পরিচালনা করেন, উচ্চ সচেতনতা তাদের মধ্যে আছে।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘অনেকেই বলেন, আমরা স্বাস্থ্যখাতে অনেক কম ব্যয় করি এই অঞ্চলের মধ্যে। অস্বীকার করার বিষয় নয়। তবে একটা পয়েন্ট আছে। অমুক রাষ্ট্র ৪০ লাখ জনসংখ্যা, জিডিপির পরিমাণ ১০০ টাকা, সে ব্যয় করে ৭০ টাকা। আর আমরা জিডিপির পরিমাণ ৯ লাখ কোটি টাকা, ৩ লাখ কোটি টাকা ব্যয় করি, কিন্তু আনুপাতিক হারে কম। এসব বিচার আসলে যথাযথ নয়। এবার প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বাজেট দিয়েছি। অনেক দেশে দেখেন ১৫ হাজার কোটি টাকা বাজেটই নেই। তবে স্বাস্থ্য খাতে অবশ্যই প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন আমাদের।’