করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের প্রভাবে এ বছর নতুন কারিকুলামের (শিক্ষাক্রম) বই দেয়া হচ্ছে না। এতে করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা আনন্দদায়ক করার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা পিছিয়ে গেল। গতকাল মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর উপস্থিতিতে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগামী শিক্ষাবর্ষে নতুন কারিকুলামের বই বিতরণের কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। করোনাভাইরাসের কারণে সকল কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষাক্রম তৈরির কাজটি করা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘এখন শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে পাণ্ডুলিপি তৈরি করে ছাপানোও কঠিন হবে। সার্বিক দিক বিবেচনায় তারা আগামী বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে বই না দেয়ার প্রস্তাব করলে সেটি গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে আগামী বছরও বিদ্যমান শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বই পাবে শিক্ষার্থী।’
তবে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষক নির্দেশিকা দেয়া হবে জানান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা। যাতে করে শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে ধারণা দিতে পারেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি (উচ্চ মাধ্যমিক) পর্যন্ত শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছে সরকার। পরিমার্জিত এই শিক্ষাক্রম হবে যোগ্যতা ও দক্ষতাভিত্তিক। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুক্ষ্ম ও সৃজনশীল চিন্তাসহ ১০ ধরনের মূল দক্ষতা শেখানো হবে। এর সঙ্গে মিল রেখে ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জীবন-জীবিকাসহ ১০টি বিষয় শেখানোর মধ্যদিয়ে একজন শিক্ষার্থীকে যোগ্য করে তোলা হবে।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে ২০২১ সাল থেকে প্রাথমিক স্তরের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণির বই দেয়ার কথা ছিল। এরপর ২০২২ সালে প্রাথমিকের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সপ্তম, নবম ও একাদশ শ্রেণির বই দেয়ার কথা ছিল। আর ২০২৩ সালে পঞ্চম, অষ্টম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বই দেয়ার কথা ছিল। তবে আগামী বছর নতুন শিক্ষাক্রমে বই দেয়া হচ্ছে না।
প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, মাধ্যমিক স্তর (দশম শ্রেণি) পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে একই ধরনের বিষয় পড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ বিষয়টি বাস্তবায়ন হলে এখনকার মতো নবম শ্রেণি থেকে একজন শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় শাখায় ভাগ করা হবে না। এই ভাগ হবে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে গিয়ে। এটি ২০২৪ সাল থেকে চালু হতে পারে।
বর্তমানে প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। সর্বশেষ ২০১২ সালে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছিল। বিদ্যমান শিক্ষাক্রম মূলত উদ্দেশ্যভিত্তিক ও শিখন ফলভিত্তিক। শিক্ষার্থীদের কী পড়ানো হবে, কেন পড়ানো হবে, কে পড়বে, কারা পড়াবেন ও কীভাবে পড়াবেন এবং পড়ার ফলে কী হব-সেসবের বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা থাকে শিক্ষাক্রমে।