৭ জুন বাঙালির রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের অনন্য এক অধ্যায়, ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। এই দিবসটি বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে স্বমহিমায় ভাস্বর। এ ছয় দফার মাধ্যমেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। বাংলাদেশের জন্য এই আন্দোলন এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে একে ম্যাগনা কার্টা বা বাঙালির মুক্তির সনদও বলা হয়। ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “৬ দফা দাবি” পেশ করেন। ৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের লাহোরে পৌঁছান এবং তার পরদিন অর্থাৎ ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ৬ দফা দাবি পেশ করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে চিত্রিত করা হয়। ফলে বঙ্গবন্ধু নিজেই ৬ ফেব্রুয়ারি এই সম্মেলন বর্জন করেন। ১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয়দফা প্রস্তাব পেশ এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি গৃহীত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দিন আহমদের ভূমিকা সম্বলিত ছয় দফা কর্মসূচির একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬-দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রচার করা হয়। যা সে সময়ের রাজনৈতিক অচলায়তন ভেঙে একটি নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা করেছিল।
ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপনের পরপরই বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠে। এর মাধ্যমে দেশব্যাপী তীব্র গণ-আন্দোলনের সূচনা হয়। আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গী, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ ১০ জন শহীদ হয়। পূর্ব বাংলার জনগণ এই আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানায়।
এই ছয় দফা আন্দোলনই এক সময় স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয়। ছয় দফার পথ ধরেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১১ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ সর্বোপরি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। নিঃসন্দেহে এর ভিত্তি সেই ছয় দফা।
আরও পড়ুন >> জয় হোক মেহনতি মানুষের