পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ব্যাংকগুলোর নগদ লভ্যাংশ বিতরণের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে ২০১৯ সালের ঘোষিত লভ্যাংশ ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে বিতরণ করতে পারবে তালিকাভুক্ত ব্যাংক।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
এর আগে, শেয়ারবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কথা বিবেচনা করে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের সুযোগ দেয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে দাবি করেন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এ বিষয়ে ইতিবাচক সায় দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই প্রেক্ষিতে আজকে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করল ব্যাংকগুলোর এ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অধিকতর স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, শুধুমাত্র ব্যক্তিশ্রেণির (স্থানীয় ও বিদেশি) বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপযুক্ত সার্কুলার এবং প্রচলিত অন্যান্য আইনের এ সংক্রান্ত বিধি-বিধান পরিপালন সাপেক্ষে ২০১৯ সালের জন্য ঘোষিত নগদ লভ্যাংশ এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের পূর্বে বিতরণ করা যাবে।
এর আগে চলতি বছরের ১১ মে, চলমান করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকে বার্ষিক লভ্যাংশ (ডিভিডেন্ট) ঘোষণার নতুন নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূলধন সংরক্ষণের ভিত্তিতে তিনটি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদসহ মোট ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে ব্যাংকগুলো। তবে ২০১৯-এর সমাপ্ত বছরের ঘোষিত লভ্যাংশ ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে বিতরণ করা যাবে না।
ওই সার্কুলারে বলা হয়, করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে শীর্ষ চাপ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা করেছে; তা বাস্তবায়নে কার্যকর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে সৃষ্ট চাপ মোকাবিলা করে ব্যাংকগুলো যাতে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিতে যথার্থ অবদান রাখতে পারে সেই লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর মুনাফা বণ্টন না করে মূলধন শক্তিশালী করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত তারল্য বাজার বজায় রাখা একান্ত অপরিহার্য।
ব্যাংকগুলোর আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যাংকের শেয়ারের বিনিয়োগকারীদের রিটার্নের বিষয়টি সার্বিকভাবে বিবেচনা করে ২০১৯-এর সমাপ্ত বছরের জন্য ব্যাংকের শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ প্রদানের নতুন নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান নিয়মে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকি ভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি ন্যূনতম সে পরিমাণ মূলধন হিসেবে রাখতে হয়। এর বাইরে আপদকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় (কনজারবেশন বাফার) হিসেবে ব্যাংকগুলোকে ২০১৬ সাল থেকে অতিরিক্ত মূলধন রাখতে হচ্ছে। গত ডিসেম্বর শেষে আপদকালীন সঞ্চয়সহ প্রতিটি ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের কথা সাড়ে ১২ শতাংশ। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোতে মূলধন নির্ধারিত সীমার বেশি থাকলেও সরকারি ব্যাংকের প্রভাবে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতের মূলধন সংরক্ষণের হার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
ব্যাংকের ডিভিডেন্ট ঘোষণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে তা হলো, ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ২০১৯ সালে মূলধন সংরক্ষণে কোনো সুবিধা না নিয়ে যেসব ব্যাংক আড়াই শতাংশ আপদকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ (কনজারেবশন বাফার) কমপক্ষে সাড়ে ১২ শতাংশ বা তারও বেশি মূলধন সংরক্ষণ করেছে ওই সব ব্যাংক তাদের সামর্থ্য অনুসারে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদসহ ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।
মূলধন সংরক্ষণে কোনো সুবিধা না নিয়ে যে সব ব্যাংক আড়াই শতাংশ আপদকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ (কনজারবেশন বাফার) কমপক্ষে ১১ দশমিক ২৫ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সে সকল ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে তাদের সামর্থ্য অনুসারে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ নগদসহ মোট ১৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ২০১৯ সালে মূলধন সংরক্ষণে সুবিধা নিয়েছে তারা তা সমন্বয় করার পর যদি আপতকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ (কনজারবেশন বাফার) ১১ দশমিক ২৫ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয় তাহলে সে সব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে তাদের সামর্থ্য অনুসারে সর্বোচ্চ ৫ নগদসহ মোট ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে। এছাড়া যাদের আপদকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ ন্যূনতম মূলধন ১১ দশমিক ২৫ শতাংশের কম বা ন্যূনতম মূলধন ১০ শতাংশ হবে তারা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ স্টক (বোনাস) ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।
২০১৯ সালের সমাপ্ত বছরের ঘোষিত লভ্যাংশ ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে বিতরণ করতে পারবে না ব্যাংকগুলো।
যেসব ব্যাংক ২০১৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর ভিত্তিতে ইতিপূর্বে ডিভিডেন্ট ঘোষণা করেছে সে সব ব্যাংক ঘোষিত ডিভিডেন্টের পরিমাণ সার্কুলারের নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে তা স্থগিত করে যথা শীঘ্রই সংশোধন করতে হবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ (২০১৮ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।