আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনি এখনও গভীর কোমায় আছেন। চেতনা ফিরে পাননি, ডাকলে সাড়া দিচ্ছেন না। সোমবার বিকালে তার বিষয়ে চিকিৎসকরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
আজ বিকাল ৪টায় চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে নাসিমের ৯৬ ঘণ্টা পার হবে। গত চার দিনে তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। অস্ত্রোপচারের পর তিনি যেমন ছিলেন, এখনও সে রকমই আছেন।
মোহাম্মদ নাসিমের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল টিমের সদস্যরা এমন তথ্য জানান।
মেডিকেল বোর্ডের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া গণমাধ্যমকে বলেন, এখনও কোনো সাড়া নেই নাসিমের। তার অবস্থা অপরিবর্তিত। তার অবস্থা সংকটাপন্ন।
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত উনার হার্ট বন্ধ না হয় বা অন্য কিছু না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তার চিকিৎসা চলবে।’
মোহাম্মদ নাসিমের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, তিনি কোমায় আছেন। সিটিস্ক্যান করার মতো অবস্থায় তিনি নেই। সিটিস্ক্যান করতে গেলেও ঝুঁকি। অবস্থার উন্নতি হলে সিটিস্ক্যান করা হবে।
তিনি জানান, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পালস গতকাল যে রকম ছিল এখনও সে রকম আছে। এখনও ভেন্টিলেশনে আছেন। শ্বাস-প্রশ্বাস আগে যে রকম ছিল এখনও সে রকমটাই আছে।
ডা. কনক কান্তি বলেন, প্রতি ঘণ্টায় বা ২৪ ঘণ্টা পর পর রোগীর শারীরিক অবস্থা কেমন হচ্ছে তা নিয়ে আমরা রিপোর্ট দিয়ে থাকি। তবে প্রাথমিকভাবে দুই-তিন বা চার দিন দেখে একটা সামআপ করে রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।
তিনি বলেন, এ ছাড়া সিটিস্ক্যানসহ অনেক পরীক্ষা করেও ব্রেনের অবস্থা আমরা বুঝতে পারি। কিন্তু শনিবার ও রোববার যে অবস্থা দেখেছি, তাতে বলা যায় তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তাকে অনেক ধরনের সাপোর্ট দেয়া আছে। সে জন্য ঝুঁকির কারণে এখন সিটিস্ক্যান করা যাচ্ছে না। তার শরীরের অবস্থা আরেকটু উন্নতি হলে সিটিস্ক্যান করা হবে।
১ জুন জ্বর-কাশিসহ ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। সেখানে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ফল পজিটিভ আসে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় মোহাম্মদ নাসিমের ব্রেনস্ট্রোক হয়। হাসপাতালের নিউরো সার্জন অধ্যাপক রাজিউল হকের নেতৃত্বে কয়েক ঘণ্টায় তার অস্ত্রোপচার সফল হয়। সফল অস্ত্রোপচার হলেও এখনও তার মাথার ভেতরে বেশ কিছু রক্ত জমাট বেঁধে আছে। স্ট্রোকের পর থেকেই তিনি অচেতন অবস্থায় আছেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মোহাম্মদ নাসিমের চিকিৎসায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ও নিউরো সায়েন্সের পরিচালক প্রফেসর ডা. দ্বীন মোহাম্মদ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়াসহ ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় ও চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থাসহ সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নাসিম আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যের পাশাপাশি ১৪ দলের মুখপাত্রও। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ নাসিম। এর আগে ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্বরাষ্ট্রসহ একাধিক মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।