মানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গৃহীত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে দায়ভার ও দায়িত্ব ভাগ করে নেয়ার নীতি সন্নিবেশিত থাকতে হবে। আর এক্ষেত্রে নিয়মিত মানবিক সহায়তার বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে কোনো কর্তন না করে অতিরিক্ত মানবিক সহায়তা তহবিল বরাদ্দ দিয়ে বৈশ্বিক মহামারির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এই জরুরি মানবিক প্রয়োজন মেটাতে হবে।
আজ ইকোসকের ২০২০ সালের মানবিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত সেগমেন্টের আওতায় ‘মানবিক প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যবিষয়ক চ্যালেঞ্জসমূহের ক্রমবর্ধমান জটিলতা নিরসন’ শীর্ষক এক উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, মানবতা ও মানবাধিকারের প্রতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতির স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্ত্যচ্যুত ১.১ মিলিয়ন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পসমূহে কভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাসে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠাসহ বাংলাদেশ সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা এ সভায় উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, এ সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে খাদ্য, পুষ্টি, পানীয় জল ও স্যানিটেশনের মতো নিয়মিত মানবিক কর্মসূচিসমূহ নির্বিঘ্নে অব্যাহত রাখা হয়েছে। কভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশেষ এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এর সংক্রমণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে যা দেশের মূল জনগোষ্ঠীর সংক্রমনের হারের চেয়ে কম। এছাড়া কভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা এবং এর পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ জাতীয়ভাবে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তাতে রোহিঙ্গাদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ইকোসকের সহ-সভাপতি মরক্কো উচ্চ পর্যায়ের এই সভায় সভাপতিত্ব করে। জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ ও মানবিক বিষয়াবলীর সমন্বয়কারী, আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক ছিলেন আলোচনা পর্বটির মডারেটর। আলোচনা পর্ব শুরুর আগে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ সভায় ভাষণ দেন।
তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারির মতো পরিস্থিতি যে কোনো মানবিক সঙ্কটকেই বাড়িয়ে তুলতে পারে; আর তাই, শরনার্থীসহ এ ধরনের মানবিক পরিস্থিতিতে নিপতিত সকলকে জাতিসংঘের মানবিক সাড়াদান সংক্রান্ত বৈশ্বিক পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
সভাটিতে আরো অংশগ্রহণ করেন নেদারল্যান্ডসের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন মন্ত্রী সিগ্রিড ক্যাগ। তিনি বলেন, প্রথমদিকে বিশ্বের বেশ কয়েকটি ধনী দেশে আঘাত হানার পরে কভিড-১৯ এর বিস্তার এখন এমন দেশগুলোতে হচ্ছে যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত নয়, এবং যেখানে দেশগুলো তাদের জনগণকে বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মধ্যে সংকুলান করতে পারছে না। ক্ষতিগ্রস্থ এসকল দেশে সঙ্কট কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়ানোর মতো সক্ষমতা বিনির্মাণের বিষয়ে জোর দেন নেদারল্যান্ডসের মন্ত্রী।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা আরো বলেন, মানবিক সহায়তা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবধানগুলো অবশ্যই দূর করতে হবে। আর অবশ্যই শরণার্থী ও অভিবাসীসহ তাদের আশ্রয়দানকারী সম্প্রদায়ের সবাইকে টিকাগ্রহণ ও চিকিৎসায় অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে হবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ওপর কোনরকম বাড়তি বোঝা চাপানো যাবে না।
তিনি বলেন, মহামারি মোকাবিলার প্রস্তুতি, সাড়াদান ও পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত মানবিক কর্মসূচিসমূহে মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত রাখার ওপর জোর দেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। এ পরিস্থিতিতে লিঙ্গ ভিন্নতা বিশেষ করে নারীরা যেসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেও লাখ লাখ মানুষ জরুরি মানবিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে পারে। যেমন জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে মানুষ বিভিন্ন জীবাণুসৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হতে পারে মর্মে উল্লেখ করে অধিকতর কার্যকর জলবায়ু কর্মপরিকল্পনার গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন স্থায়ী প্রতিনিধি।
ইকোসকের ২০২০ সালের মানবিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত সেগমেন্টের এই সভায় মানবিক বিষয়াবলী সমন্বয় সংক্রান্ত কার্যালয় (ওচা), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্টসহ অন্যান্য জাতিসংঘ এজেন্সিসমূহের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। তাদের এতদসংশ্লিষ্ট কার্যক্রম উল্লেখ করার পাশাপাশি কভিড-১৯ মহামারিতে মানবিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তারা যেসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন তা তুলে ধরেন।