দেশের তিন শতাধিক পৌরসভাসহ অন্যান্য নির্বাচন আয়োজনে ৪৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা পেতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনা প্রকল্পে পাচ্ছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
এসব মিলিয়ে আগামী (২০২০-২১) অর্থবছরে বাজেটে নির্বাচন কমিশনের জন্য ১ হাজার ৬৭৯ কোটি ৬ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব উঠছে। এর মধ্যে কমিশন সচিবালয়ের জন্য ১ হাজার ৫৮ কোটি ৫ লাখ টাকা ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে ৬২১ কোটি ১ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে। জাতীয় সংসদে এ প্রস্তাব পাস হলে আগামী অর্থবছরে এ টাকায় চলতে হবে কমিশনকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে পরিচালন খাতে সংশোধিত বরাদ্দের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব উঠছে। তবে ইভিএমসহ উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ প্রায় ৬২ শতাংশ কমিয়ে আনার প্রস্তাব করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে তিন শতাধিক পৌরসভায় সাধারণ নির্বাচন রয়েছে।
এছাড়া উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনেও নির্বাচন রয়েছে। এছাড়া জাতীয় সংসদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে ৫ শতাংশ হারে উপনির্বাচনের প্রয়োজন হতে পারে- এমন বিবেচনায় অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করে ইসি। যদিও ওই প্রস্তাবের পরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে শতাধিক নির্বাচন আটকে গেছে। এদিকে উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ কম প্রস্তাব করায় এর কার্যক্রম সীমিত হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর মত ও পথকে বলেন, জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। তবে এটা বলা যায়, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ কমে গেলে এর কার্যক্রমও সীমিত করতে হবে। আর নির্বাচন পরিচালন খাতে ব্যয় বাড়লে সরকার সংশোধিত বাজেটে চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দিয়ে থাকে।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালন খাতে ১ হাজার ৫৮ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব উঠছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ছিল ৭৩৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পরিচালন খাতের আওতায় নির্বাচন আয়োজন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ ও ইসির মাঠ পর্যায়ের ব্যয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সামনে সারা দেশে পৌরসভায় সাধারণ নির্বাচন এবং নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের কারণে ব্যয় ১০ গুণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী অর্থবছরে পরিচালন খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। পরিচালন খাতের ১ হাজার ৫৮ কোটি টাকার মধ্যে ৪৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা শুধুমাত্র নির্বাচন আয়োজনে ব্যয় প্রস্তাব করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে তা ছিল ২০১ কোটি ৪ লাখ টাকা। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কার্যক্রমের জন্য ৩০৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে; যা বর্তমান অর্থবছরে ছিল ৪৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা। নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের জন্য ৬৫ কোটি ১ লাখ টাকা, ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ কাজে ৬২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের জন্য ৩৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। পরিচালন খাতে কমিশন সচিবালয়ের জন্য ২৪৭ কোটি টাকা সাধারণ থোক বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এ টাকা ব্যয় করতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে ইসিকে।
উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে ৬২ শতাংশ
জানা গেছে, বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুমোদিত তিনটি প্রকল্প রয়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দের তুলনায় আগামী অর্থবছরে ৬২ শতাংশ কম বরাদ্দের প্রস্তাব উঠছে। নির্বাচন কমিশনের প্রকল্পগুলোর জন্য আগামী অর্থবছরে ৬২১ কোটি ১ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
যদিও চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৬৪৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রায় ৬২ শতাংশ বরাদ্দ কমছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্য প্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার প্রকল্পে ৪৯৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে বাজেটে।
চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৪৮৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আরেক প্রকল্প আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহেনসিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পে ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রয়েছে ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
২০১১ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পটি তিনবার সংশোধন করে ২০১৯ সালের ৬ জুন মেয়াদ শেষ হয়। পরবর্তীকালে পরিকল্পনা কমিশন আবারও এর মেয়াদ বাড়িয়েছে। অপরদিকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ (এসসিডিইসিএস) প্রকল্পে ১০ কোটি ৭১ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব উঠছে। এছাড়া কমিশনের অননুমোদিত প্রকল্পের জন্য ১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা সংরক্ষণ রাখা হচ্ছে।