মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের পর এবার উৎসস্থল চীনকে পেছনে ফেলল বাংলাদেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন শনাক্তের তালিকায় দুই হাজার ৮৫৬ জন মানুষ যুক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত হলেন ৮৪ হাজার ৩৭৯ জন। আর চীনে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৮৩ হাজার ৭৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মারা গেছেন ৪৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল এক হাজার ১৩৯ জনে। নতুন সুস্থ হয়েছেন ৫৭৮ জন।
আজ শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে করোনাভাইরাস সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৯টি ল্যাবে ১৪ হাজার ৩৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আগের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয় ১৬ হাজার ৬৩৮টি। এতে দুই হাজার ৮৫৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এর আগে গতকাল একদিনে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৪৭১ জনের দেহে করোনা শনাক্তের কথা জানানো হয়েছিল। গত ১১ জুন একদিনে তিন হাজার ১৮৭ জন ও তার আগের দিন (১০ জুন) একদিনে সর্বোচ্চ তিন হাজার ১৯০ জনের দেহে করোনা শনাক্তের কথা জানানো হয়। এর আগে গত ৯ জুন সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছিলেন তিন হাজার ১৭১ জন।
এ পর্যন্ত চার লাখ ৮৯ হাজার ৯০৭ জনের করোনা পরীক্ষা করে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৪ হাজার ৩৭৯ জনে। এর ফলে চীনে শনাক্ত হওয়ার ছয় মাসের মাথায় এসে শনাক্তের সংখ্যায় চীনকে পেছনে ফেলল বাংলাদেশ। ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, চীনে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৮৩ হাজার ৭৫ জন। আর মারা গেছেন, চার হাজার ৬৩৪ জন। তবে চীনের তুলনায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম।
নাসিমা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একদিনে সর্বোচ্চ ৪৪ জন। এর আগে গতকাল একদিনে সর্বোচ্চ ৪৬ জন, গত ৯ জুন ৪৫ মৃত্যু, ৭ ও ৮ জুন টানা দুদিন ৪২ মৃত্যুর কথা জানানো হয়। তার আগে গত ৩১ মে একদিনে সর্বোচ্চ ৪০ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়। এ নিয়ে মোট মৃত্যু এক হাজার ১৩৯ জনের। নতুন মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৩৩ জন ও নারী ১১ জন। নতুন মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগ ১৯ জন ও চট্টগ্রামে ১৩ জন, সিলেট ২, রংপুর ১, বরিশাল ৪, খুলনা ১ ও রাজশাহী ৪ জন।
নাসিমা আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সুস্থ হয়েছেন ৫৭৮ জন। এ নিয়ে মোট ১৭ হাজার ৮২৭ জন সুস্থ হয়েছেন। ব্রিফিংয়ের করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন অধ্যাপক নাসিমা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, করোনা মোকাবিলায় তরল খাবার, কুসুম গরম পানি ও আদা চা পান করতে হবে। সম্ভব হলে মৌসুমী ফল খাওয়া ও ফুসফুসের ব্যায়াম করা। এ সময় ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। কারণ, এটি ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।
চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সেদিন তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছিল আইইডিসিআর। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার।
ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়ানো হয় সেই ছুটি। ৭ম দফায় বাড়ানো ছুটি চলে ৩০ মে পর্যন্ত। ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি নেই। এখন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ভিত্তিক লকডাউন চলছে। তাই অফিস আদালতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সরঞ্জামাদি রাখা ও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ৪ লাখ ২৮ হাজার ২৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৭ লাখ ৩২ হাজার ৪৮৫ জন। আর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৫৪ জন।
চীন উহান শহর থেকে শুরু হয়ে ইউরোপে তাণ্ডব চালানোর পর প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণের কেন্দ্র দক্ষিণ এশিয়া ও আমেরিকা। আক্রান্ত ও মৃত্যুতে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
করোনাভাইরাসের আক্রমণে সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২১ লাখ ১৬ হাজার ৯২২। দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ৮২৫ জনের। আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছে নেই কোনো দেশ।
আক্রান্ত ও মৃতের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরপরই রয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। সেখানে এখন মোট আক্রান্ত আট লাখ ২৯ হাজার ৯০২। দেশটিতে করোনায় মৃত্যু ৪২ হাজারের কাছাকাছি। দেশটিতে করোনায় মোট ৪১ হাজার ৯০১ জন মারা গেছেন।
করোনা রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে পাঁচ লাখ ১১ হাজার ৪২৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ছয় হাজার ৭১৫ জনের।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে চীনকে টপকে গেছে ভারত। দেশটি বিশ্বের মধ্যে চার নম্বরে চলে গেছে। ভারতে এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ নয় হাজার ৬০৩ জন। মারা গেছেন ৮৮৯০ জন। অন্যদিকে সার্কভুক্ত ওপর দেশ পাকিস্তানে সংক্রমণের সংখ্যা এক লাখ ৩২ হাজার ৪০২ জন। মৃত্যু দুই হাজার ৫৫১ জনের। নেপালে শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৬২জন, মৃত্যু ১৬ জনের। ভুটানে শনাক্ত ৬২ জন। মৃত্যু নেই। শ্রীলংকা শনাক্ত এক হাজার ৮৮০ জনের, মৃত্যু ১৮ জনের।