টানা আটদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চির বিদায় নিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক, সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। আজ শনিবার সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর শ্যামলী বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, পঁচাত্তরে জেল হত্যায় শহীদ জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ। তাঁর সঙ্গে আমার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি আমৃত্যু মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। জাতির সংকটময় মুহূর্তে এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের মৃত্যু দেশে অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করেছে। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, রক্তচাপজনিত সমস্যা নিয়ে ১ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। ওই দিনই তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ জুন স্ট্রোক করেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যার কারণে দ্রুত অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে। দুই দফায় ৭২ ঘণ্টা করে পর্যবেক্ষণে রাখে মেডিকেল বোর্ড। এর মধ্যেই পরপর তিনবার নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি তার শরীরে। টানা আটদিন তাকে সেখানে রাখা হলেও জ্ঞান ফেরেনি।
গত বৃহস্পতিবার তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। চিকিৎসকরা জানান, রক্তচাপ ব্যাপক ওঠানামা করছিল। শুক্রবার হৃদযন্ত্রেও জটিলতা ধরা পড়ে।
মোহাম্মদ নাসিমের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া শুক্রবার জানিয়েছিলেন তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল পরিবার। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় তারা আর এগোয়নি।
মোহাম্মদ নাসিম বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মুখপাত্রও তিনি।
জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম। তিনি ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা।