মানবপাচারের অভিযোগে সম্প্রতি কুয়েতে আটক বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে ইঙ্গিত করে সবচেয়ে বড় মানবপাচার চক্রের হোতাকে আটকের খবর জানিয়েছেন দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস আল সালেহ। শনিবার এক টুইটে তিনি এই খবর জানান। তবে পাপুলের নাম উল্লেখ করা হয়নি সেই টুইটে।
কুয়েতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কুনা’র খবরে বলা হয়, আনাস আল সালেহ টুইটে বলেন, ‘মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি সরকারি কর্মকর্তা হোন কিংবা বিশিষ্ট কোনো নাগরিক, তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এ বিষয়ে গত কয়েক সপ্তাহের সাফল্যের জন্য আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অভিবাদন জানাই। তারা সবচেয়ে বড় মানবপাচারকারীর হোতাকে আটক করেছেন, যিনি এশিয়ার একটি দেশের নাগরিক। ওই তদন্তে গোয়েন্দারা সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছেন।’
এদিকে কুয়েতের সাংসদ আবদুল করিম আল কানডারি মানবপাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক সাংসদ কাজী শহীদ ইসলামের সঙ্গে জড়িত কুয়েতের মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। শনিবার টুইটে লিখেছেন, মানবপাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে বাংলাদেশের একজন সাংসদের জড়িত থাকার বিষয়টি ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই তার সঙ্গে যুক্ত সরকারে প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের নামও প্রকাশ করা হয়েছে। জনগণ মনে করে, ওই দুর্নীতির সঙ্গে প্রভাব খাটানো ও ঘুষ লেনদেনের বিষয়গুলো জড়িত।
গত ৬ জুন কুয়েতের মাশরিফ এলাকায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি পাপুলকে নিজের বাসা থেকে আটক করে দেশটির সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট)। আটকের পরদিন তার জামিন আবেদন নাকচ করে আদালত তাকে মানবপাচার ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগে সিআইডির রিমান্ডে পাঠায়। এরই মধ্যে সিআইডি সাংসদ কাজী শহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে ১১ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। ১১ জনই সাংসদের বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ আনার পাশাপাশি প্রতিবছর ভিসা নবায়নের জন্য বাড়তি টাকা নেয়ার অভিযোগ এনেছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচারের তদন্ত অনেকটাই শেষ করেছে সেখানকার গোয়েন্দারা। তারা এখন তার বিরুদ্ধে অবৈধ মুদ্রা পাচারের অভিযোগের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সিআইডির সদস্যরা পাপুলে প্রতিষ্ঠান মারাফী কুয়েতিয়া গ্রুপ অব কোম্পানিজের দপ্তরে গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে সিআইডির কর্মকর্তারা।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে কুয়েতের গণমাধ্যম আরব টাইমস ও আল কাবাশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশের আটক সাংসদের বিরুদ্ধে মানব ও অবৈধ মুদ্রা পাচারের বিষয়টি প্রথম গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। যদিও কুয়েতের গণমাধ্যমে সাংসদ পাপুলের নাম প্রচার করেনি। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি অভিবাসীর মাধ্যমে সাংসদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ পায় কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগের তথ্য প্রমাণের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়।