দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর এতদিন পর্যন্ত সুস্থ হওয়া মানুষের যে সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দিচ্ছিল তা দৈনিক এক হাজারের নিচেই ছিল। গতকাল ৯৩০ জনসহ মোট সুস্থতার সংখ্যা বলা হয়েছিল ১৮ হাজার ৭৩০। কিন্তু আজ বলা হয়েছে সংক্রমণ শুরুর পর থেকে মোট ৩৪ হাজার ২৭ জন সুস্থ হয়েছেন। গতকালের মোট সুস্থতার সংখ্যার সঙ্গে একদিনে ১৫ হাজার ২৯৭ বেশি যোগ হয়েছেন! অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ২৯৭ জন!
নতুন এ সুস্থতার সংখ্যা হিসেবে নিয়ে শনাক্ত বিবেচনায় আজ সুস্থতার হার হয় ৩৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। যা গতকাল পর্যন্ত, প্রায় তিন মাসে ছিল ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ।
আজ সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে করোনাভাইরাস সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।
৫৮টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে নাসিমা সুলতানা বলেন, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ হাজার ৭৩৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৫ হাজার ৩৮টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৫০৩টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৯৯ জনের মধ্যে। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৯০ হাজার ৬১৯ জনে।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টা যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের মিলিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা এখন ৩৪ হাজার ২৭ জন। এ হিসেবে একদিনের ব্যবধানে সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ২৯৭ জন!
গতকাল থেকে সুস্থতার হারে এত পার্থক্য সম্পর্কে ব্যাখ্যায় নাসিমা জানান, এতদিন পর্যন্ত যারা হাসপাতালে সুস্থ হচ্ছিলেন সেই তথ্য দেয়া হয়েছে। আজ নতুন সুস্থের তালিকায় আনা হয়েছে যারা বাসায় চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন এবং যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে উপসর্গবিহীন ছিলেন; অতপর সুস্থ হয়েছেন, তাদের সবাইকে।
তিনি বলেন, “গত দিনের চেয়ে আমরা আজকে সুস্থতা অনেক বেশি বলছি, কারণ আজকে যারা সুস্থ হয়েছেন তাদের মধ্যে হাসপাতালে শুধু না, বাসায় এবং যারা উপসর্গবিহীন ছিলেন তাদের সবাই এটার মধ্যে যোগ হয়েছেন। এই তথ্য আমাদের আইইডিসিআর সরবরাহ করেছে।’’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩৮ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ২০৯ জনের।
চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সেদিন তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছিল আইইডিসিআর। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ছোবলে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানোর পর এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা চার লাখ ৩৫ হাজার প্রায়। তবে ৪১ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। প্রথমদিকে আক্রান্ত ও মৃতের হার কম থাকলেও এখন যেন কাউকে ছাড় দিচ্ছে না অদৃশ্য এই ভাইরাস।
আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন মন্ত্রিসভার সদস্য, সাংসদসহ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারাও। এতদিন চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিক, ব্যাংকার, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ তুলনামূলক বেশি আক্রান্ত হচ্ছিলেন। কিন্তু এখন বিশিষ্টজনদের আক্রান্ত হওয়া এবং কারও কারও মৃত্যুর ঘটনায় সাধারণ মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে। নিজের ও পরিবারের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়ানো হয় সেই ছুটি। ৭ম দফায় বাড়ানো ছুটি চলে ৩০ মে পর্যন্ত। ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি নেই। এখন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাভিত্তিক লকডাউন চলছে। তাই অফিস আদালতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সরঞ্জামাদি রাখা ও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।