জাতীয় সংসদে সোমবার বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৪৬ হাজার ৫১৬ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট সংসদে পাস হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ, হ, ম মুস্তফা কামাল গত ১১ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশের সাথে চলতি অর্থ বছরের জন্য এই সম্পূরক বাজেটও পেশ করেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের বৈঠক শুরুর পর সম্পূরক বাজেটের উপর আলোচনা শুরু হয়। ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০২০ পাসের মধ্যে দিয়ে কণ্ঠভোটে সম্পূরক বাজেট পাস হয়।
সরকারের যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তাদের মূল বরাদ্দের থেকে বেশি খরচ করেছে তার অনুমোদন নিতেই এই বাজেট পাস করা হয় প্রতি বছর। ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সংশোধনের ফলে তা ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের সাধারণ বাজেটের সঙ্গে পেশ হয় চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট। সম্পূরক বাজেটের ওপর বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও গণফোরামের সংসদ সদস্যরা ১৬৭টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেন। তবে সেগুলো কণ্ঠভোটে বাতিল হয়।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ২৪ টি মঞ্জুরি দাবির ভিত্তিতে সম্পূরক বাজেটটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। ছাঁটাই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে দুটি সমাজকল্যাণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের। এর ওপর আলোচনা হয়।
সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের পক্ষে পাঁচটি মঞ্জুরি দাবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার উত্থাপিত দাবিগুলো ছিল- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপষিদ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সংশ্লিষ্ট।
সংসদে উত্থাপিত বিদায়ী অর্থবছরের সম্পূরক আর্থিক বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে ৬২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অনুকূলে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে ২৬টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ ৪৬ হাজার ৫১৬ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা বেড়েছে এবং ৩৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ ১৮ হাজার ৩৫৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা কমেছে। সার্বিকভাবে ২১ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত বরাদ্দ নিট দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
সম্পূরক বাজেটে অর্থ বিভাগ সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার ৩৫৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। সবচেয়ে কম ১ কোটি ৫৪ লাখ কম বরাদ্দ পেয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সম্পূরক বাজেট করোনা দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য স্বাস্থ্যসেবা খাত, স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে অতিরিক্ত তিন হাজার ৬০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
গত ১১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরকারের আগামী এক বছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব দিয়েছেন, যা ৩০ জুন পাস হওয়ার কথা। এদিকে সম্পূরক বিল পাস হওয়ার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত সংসদের বৈঠক মুলতবি করেন।
মহামারির প্রেক্ষিতে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বাজেট অধিবেশন চলছে। বাজেটের ওপর আলোচনার সময়ও অন্য বছরের তুলনায় কমানো হয়েছে। সংসদের বৈঠকে প্রতিদিন সদস্যদের উপস্থিতি ৮০ থেকে ৯০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে।