করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে লকডাউন থাকায় গত এপ্রিলে তেলের চাহিদা কমে গিয়েছিল ইতিহাসে যেকোনও সময়ের তুলনায় সবচেয়ে দ্রুত। ফলে তেল ব্যবসায়ীদের সামনে খোলা ছিল আর একটাই পথ- উৎপাদন কমিয়ে দেয়া।
মার্চ থেকে মে মাসে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই তেলের উৎপাদন কমানো হয় দিনে দুই মিলিয়ন ব্যারেল। মে-জুনে প্রতিদিন রেকর্ড ৯ দশমিক ৭ মিলিয়ন ব্যারেল উৎপাদন কমাতে সম্মত হয় তেল রপ্তানিকারকদের সংগঠন ওপেক ও এর মিত্র দেশগুলো। উৎপাদন কমানোর ফলে তেলের অব্যাহত দরপতন অবশেষে ঠেকানো সম্ভব হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি যেখানে অপরিশোধিত তেলের দাম নেমে এসেছিল ১৭ ডলারের নিচে, সেখানে জুনে এর দাম দাঁড়ায় ৪২ ডলার পর্যন্ত।
দাম বাড়লেও তেলের বাজার এখনও মন্দা। তেল উৎপাদন কমানোর সময়সীমা আরও একমাস বাড়িয়েছে ওপেক ও মিত্ররা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তেল সরবরাহ আগের মতো স্বাভাবিক হবে কবে?
ভবিষ্যতে তেল সরবরাহের বিনিয়োগে ধস নেমেছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) জানিয়েছে, ২০০৫ সালের পর এ বছর তেল ব্যবসায় বিনিয়োগ সর্বনিম্ন হতে পারে।
গোল্ডম্যান স্যাশ ব্যাংকের বিশ্বাস, ২০২০ সালে ওপেকের বাইরে তেলের উৎপাদন কমবে। তবে সেটি চাহিদা কমে যাওয়া বা ভৌগলিক কারণে নয়, বরং বিনিয়োগের অভাবে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান বার্নস্টেইনের মতে, নন-ওপেক দেশগুলো, যারা সারাবিশ্বে তেল চাহিদার ৬০ শতাংশ মেটাচ্ছে, তাদের উৎপাদন গত বছরের সমান হতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
তেল বাণিজ্যে এই বিনিয়োগ সংকটের শুরু অবশ্য করোনা মহমারির অনেক আগেই হয়েছিল। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্যাপক দরপতনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। ২০১৭ সালে দাম কিছুটা বাড়লেও এ ব্যবসায় আগের মতো বিনিয়োগ আর পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে তেল উৎপাদকরা লাভের মুখ দেখলেও বিনিয়োগ হ্রাসের ধারা থামেনি। আইইএ’র হিসাবে, গত বছর তেল-গ্যাসের ব্যয় ২০১৪ সালের তুলনায় ৪৩ শতাংশ কম ছিল।
বার্নস্টেইন ওপেক ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে ৫০টি বৃহত্তম জ্বালানি কোম্পানি পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছে, ২০১৯ সালে কোম্পানিগুলো চলমান অর্থপ্রবাহের মাত্র ৬৪ শতাংশ পুনর্বিনিয়োগ করেছে। দীর্ঘমেয়াদে এর পরিমাণ গড়ে ৮৭ শতাংশ।
বিনিয়োগ হ্রাসের এ হার করোনা মহামারিতে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেটা ফার্ম রিস্ট্যাড এনার্জির হিসাবে, গত মাসে প্রতিদিন যে তিন মিলিয়ন ব্যারেল তেল উৎপাদন বন্ধ হয়েছে, এর বেশিরভাগই আমেরিকা ও কানাডার; এবং এদের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ আর কোনওদিনই চালু হবে না।
আইইএ তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছে, চলতি বছর তেলের বিনিয়োগ গত বছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ এবং ২০১৪ সালের তুলনায় ৬২ শতাংশ কম হতে পারে। পাঁচ বছর আগের তুলনায় এখন বিনিয়োগ এমনিতেই কম, এর পরিমাণ আরও কমে গেলে তেল সরবরাহেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট