প্রাণঘাতী করোনার প্রকোপের মধ্যে চলছে সংসদের বাজেট অধিবেশন। যে কারণে আগের থেকে অনেক কাটছাঁট করে চলছে বাজেট আলোচনা। এরই অংশ হিসেবে ঝুঁকি এড়াতে অনেক সংসদ সদস্যকে অধিবেশনে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। সংসদ সচিবালয় থেকে ফোন করে তাদের অনুরোধ করা হয়। অবশ্য অনেকে নিজে থেকেই সংসদের দিকে পা বাড়াচ্ছেন না।
দেশে ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন প্রতিমন্ত্রী, আক্রান্ত হয়েছেন দুজন মন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য। অনেকের পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত করোনায়। এমপিদের কেউ কেউ সুস্থও হয়ে উঠছেন। করোনায় যেহেতু বয়স্কদের বেশি ঝুঁকি তাই এমন অনেককেও না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
সংসদ সচিবালয়ের তালিকা যাচাই বাছাই করে দেখা গেছে, বাজেট অধিবেশনে করোনাভাইরাসের কারণে ২৫ জন এমপিকে সংসদে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তাদের কেউ কেউ সিনিয়র হওয়ায়, কেউ অসুস্থ, আবার কারও পরিবারের সদস্য অসুস্থ হওয়ায় সংসদ অধিবেশনে যোগ না দিতে তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া একজন এমপি হাসপাতালের মালিক হওয়ায় তাকেও সংসদে না আসার অনুরোধ করা হয়েছে। তালিকায় নেই এমন কয়েকজনও আছেন যাদের না আসার জন্য বলা হয়েছে।
আর যাদের সংসদে যোগ দেয়ার জন্য তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তাদেরও কাউকে তিনদিন, কেউ আবার দুদিন যোগ দিতে পারবেন। তবে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম সিদ্দিকীসহ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের এ বিষয়ে তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
সংসদে না যেতে অনুরোধ করা হয়েছে যাদের
শারীরিক অসুস্থতা ও বয়সের কারণে যেসব সংসদ সদস্যকে অধিবেশনে না আসতে অনুরোধ করা হয়েছে তারা হলেন বিরোধীদলীয় নেতা ও ময়মনসিংহ-৪ আসনের এমপি রওশন এরশাদ, সংসদ উপনেতা ও ফরিদপুর-২ আসনের সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ঝালকাঠী-২ আসনের আমির হোসেন আমু, ভোলা-১ আসনের তোফায়েল আহমেদ, গোপালগঞ্জ-২ আসনের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ঢাকা-১৮ আসনের অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, চট্টগ্রাম-১ আসনের ইঞ্জিনিয়ার মোশররফ হোসেন, ফরিদপুর-৩ আসনের খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বরিশাল-১ আসনের আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, নওগাঁ-৪ আসনের ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, জামালপুর-১ আসনের আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা-৮ আসনের রাশেদ খান মেনন, পিরোজপুর-২ আসনের আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, শেরপুর-৩ আসনের একে এম ফজলুল হক, পাবনা-৩ আসনের মকবুল হোসেন, ময়মনসিংহ-৬ আসনের মোসলেম উদ্দিন, পটুয়াখালী-১ আসনের মো. শাহজাহান মিয়া, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের মো. দবিরুল ইসলাম, খুলনা-১ আসনের পঞ্চানন বিশ্বাস, বিএনপির সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার।
এছাড়া, সংরক্ষিত আসনের শেখ এ্যানী রহমান ও জিন্নাতুল বাকিয়া, তাহমিনা বেগম, স্বামী অসুস্থ থাকায় আদিবা আনজুম মিতা, রাশেদ খান মেননের স্ত্রী লুৎফুন নেসা খানকেও অনুরোধ করা হয়েছে অধিবেশনে যোগ না দিতে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীব বাহাদুর উশৈসিং প্রথমে এ তালিকায় না থাকলেও তারা দুজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
এছাড়া করোনা পজিটিভ হওয়ার জন্য নওগাঁ-২ আসনের শহীদুজ্জামান সরকার, চট্টগ্রাম-৬ আসনের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, যশোর-৪ আসনের রণজিৎ কুমার রায়, জামালপুর-২ আসনের ফরিদুল হক খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের এবাদুল করিম, চট্টগ্রাম-৮ আসনের মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এবং চট্টগ্রাম-১৬ আসনের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে সংসদ অধিবেশনে যোগ না দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অবশ্য এদের মধ্যে শহীদুজ্জামান সরকার ও এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। তালিকায় না থাকলেও করোনা পজিটিভ আসায় গণফোরামের মুকাব্বির খানও সংসদে যেতে পারবেন না।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল), রাজবাড়ী-১ আসনের কাজী কেরামত আলী, বাগেরহাট-২ আসনের শেখ তন্ময়কেও অধিবেশনে যোগ না দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। বাগেরহাট-১ আসনের এমপি ও শেখ তন্ময়ের বাবা শেখ হেলাল উদ্দিনকে আগেই অনুরোধ করা হয়েছে অধিবেশনে যোগ না দিতে। নওফেলের পরিবারের বেশ কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কাজী কেরামত আলীর রেবেকা সুলতানা সাজু করোনা থেকে কিছুদিন আগে সুস্থ হয়েছেন। আর শেখ তন্ময়ের ব্যক্তিগত সহকারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এ বিষয়ে সরকারি দলের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রবীণ ও অসুস্থ সংসদ সদস্যদের অধিবেশনে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে কাউকে অধিবেশনে যোগ দিতে নিষেধ করা হয়নি। যারা করোনা পজিটিভ, তাদের সবাইকে নিষেধ করা হয়েছে। সবার কথা বিবেচনা করেই এ কাজ করা হয়েছে।