দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের ফলে চরম অবস্থা বিরাজ করছে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে অর্থনীতি। রপ্তানি আয়-রেমিটেন্স সবকিছুতেই যখন বেহাল অবস্থা সেই সংকটের মধ্যেই এই বছর বাংলাদেশ মোট দেশজ উৎপাদনে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। একইসঙ্গে আগামী বছর প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে বলে ধারণা করছে সংস্থাটি।
আজ বৃহস্পতিবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদনের এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারি এবং বাংলাদেশে এর প্রকোপে চলতি অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এডিবির এ প্রতিবেদনেও তা এসেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরের জন্যও ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল। কিন্তু মহামারির মধ্যে দুই মাসের লকডাউন আর বিশ্ব বাজারের স্থবিরতায় তা বড় ধাক্কা খায়। মহামারিতে রপ্তানি আয় তলানিতে ঠেকায় এবং রেমিটেন্স কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না বাড়ায় চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সংশোধন করে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।
তবে এডিবি চলতি বছরের ক্ষেত্রে আরও কিছুটা কম প্রাক্কলন ধরে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আভাস দিয়েছে। আর নতুন অর্থবছরের প্রথম দুই প্রান্তিকে ক্ষতি সামলে বাংলাদেশ ২০২১ সালে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে বলে প্রতিবেদনে প্রাক্কলন করা হয়েছে।
অবশ্য বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ বলেছে, আগামী বছর তা ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। এডিবি বলেছে, ভাইরাসের বিস্তার শুরুর তিন মাসের মধ্যে মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবার সচল করা যাবে ধরে নিয়ে এই প্রাক্কলন করেছে তারা।
মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ, ক্ষতি কাটাতে ঘোষিত প্রণোদনা এবং অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলোও বিবেচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে বাংলাদেশ সরকার আগের বারের মতোই ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির বড় লক্ষ্য ধরেছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, অতীতের অর্জনের ধারাবাহিকতায় জিডিপির এই লক্ষ্য তারা ঠিক করেছেন। বাজেটে নতুন অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে বেঁধে রাখার আশা করছে সরকার। যদিও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, চলতি বছরের মে পর্যন্ত গত ১২ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশে উঠেছে। এডিবিও বলেছে, খাবারের দাম বৃদ্ধি এবং বাসা-বাড়ির গ্যাসের দাম বাড়ায় চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। তবে সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি হলে আগামী অর্থবছরে তা কমে ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে বলে মনে করছে এডিবি। এক্ষেত্রেও সরকারের প্রণোদনাগুলোর ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়বে বলে ধরে নিয়ে এই হিসাব করা হয়েছে।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন পারকাশ এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা, বিনিয়োগ আকর্ষণের উদ্যোগ, দেশের ভেতরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষক, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করা হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দ্রুত সচল করা যাবে। বাংলাদেশের মানুষের দুর্যোগে টিকে থাকার ক্ষমতারও প্রশংসা করেছেন মনমোহন পারকাশ।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জরুরি এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় এডিবি ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে ৬০ কোটি ডলার ঋণ এবং ১৪ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে। আগামী অর্থবছরও এডিবির সহায়তা অব্যাহত থাকবে।