ঐক্যবদ্ধ মজলুমের আওয়াজ সরকারের চরম পরিণতি ডেকে আনবে : রিজভী

মত ও পথ প্রতিবেদক

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
ফাইল ছবি

গত তিন মেয়াদ ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্যখাত নিয়ে জনগণের সঙ্গে ধাপ্পাবাজি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সরকারের বারবার একইরকম প্রতিশ্রুতি ‘কাজীর গরু কেতাবেই থাকছে, গোয়ালে নেই’ প্রবাদের মতো বলেও মনে করেন তিনি।

শুক্রবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে রিজভী এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

রিজভী বলেন, ‘করোনাভাইরাস আতঙ্কে কাটছে মানুষের দিন। মানুষ বিপর্যস্ত ও আতঙ্কিত। করোনা ভীতিতে আচ্ছন্ন দেশের জনগণ। মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে প্রতিদিন। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল অবস্থায় জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে।’

হাসপাতালগুলোতে ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ও করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা সারাবিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন দাবি করে তিনি বলেন, ‘করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে। ল্যাবে নমুনার স্তুপ জমা হয়ে আছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের বর্তমান দুর্দশায় প্রমাণিত হয়েছে, এই সরকার জনগণের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে ধাপ্পাবাজি করেছে। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৭টি জেলাতেই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট নেই। করোনা ভাইরাসের এই মহামারির সময়ে মানুষের জীবনের বিনিময়ে স্বাস্থ্যখাতের বিপন্ন ও ভঙ্গুর ছবি প্রকাশ হয়ে পড়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর রবিবার দেশের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মরহুম মোহাম্মদ নাসিম জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, চলতি মাসেই অর্থাৎ ২০১৪ সালের নভেম্বর মাস থেকেই জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও হৃদরোগীদের জন্য বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্র (সিসিইউ) এর কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। সেই প্রতিশ্রুতির ঠিক ছয় বছর পর ২০২০ সালে এসেও আওয়ামী সরকারের মুখে সেই একই কথা। একই প্রতিশ্রুতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৮ এপ্রিল শনিবার জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘প্রতিটি জেলা হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) স্থাপন করা হবে’। আওয়ামী সরকারের বারবার একইরকম প্রতিশ্রুতি ‘কাজীর গরু কেতাবেই থাকছে, গোয়ালে নেই’-এর মতো।’

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা যখনই আওয়ামী লীগের দুর্নীতি-দুরাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি, আমাদের পেছনে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে র‌্যাব-পুলিশ। এখন জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে, এই সরকারের হাতে মানুষের জানমাল নিরাপদ নয়।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘দেশের গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে গত একদশক ক্ষমতাসীন সরকার জনগণকে কথিত উন্নয়নের গল্প শুনিয়েছে। অথচ, নির্মম বাস্তবতা হলো, উন্নয়নের শ্লোগানের আড়ালে গত একদশকে দেশে দুর্নীতির-অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া আর কিছুই হয়নি। এই করোনার প্রকোপের মধ্যেও সরকার দুর্নীতির সংবাদ আড়াল করার জন্য প্রায় প্রতিদিনই গণমাধ্যমের সাংবাদিকদেরকে ডেকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানি করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো ‘ব্ল্যাক ল’ প্রয়োগের মাধ্যমে গুম, মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তার এখন এই ভয়াল করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবের মধ্যেও নিত্য দিনের ঘটনা।’

ফেসবুকে লেখালেখির কারণে সম্প্রতি দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান রিজভী। বলেন, ‘সরকারের সীমাহীন জুলুম, মামলার কারণে সারাদেশের মানুষ মজলুমে পরিণত হয়েছে। তবে অচিরেই ঐক্যবদ্ধ মজলুমের আওয়াজ এই নিশিরাতের সরকারের চরম পরিণতি ডেকে আনবে।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে