দুর্নীতিবাজরা নিজদেরকে রাষ্ট্রের চেয়েও প্রভাবশালী মনে করছে: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
ফাইল ছবি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই মহামারির সময়েও অবিশ্বাস্য গতিতে চলছে দুর্নীতির এক্সপ্রেস ট্রেন। এই দ্রুতগতির ট্রেন থামানোর বদলে নানাভাবে প্রশ্রয় দিয়ে আসা হচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।

আজ শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে রিজভী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের শাস্তির বদলে রক্ষার চেষ্টায় অনিয়ম বাড়ছে। দুর্নীতিবাজরা যেন দুর্নীতির উল্লাসের নৃত্য করছে এবং এই করোনাকালে বাধাহীন দুর্নীতির উৎসব চলছে বিভিন্ন সেক্টরে।

রিজভী বলেন, সরকারি প্রকল্পে অনিয়মের খবর প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে কোনো কোনো কর্তৃপক্ষ, গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। তবে তা খুব কমই আলোর মুখ দেখে। শাস্তির বদলে অদৃশ্য কারণে রেহাই পায় দুর্নীতিবাজরা। তারপর বীরদর্পে তারা অব্যাহত রাখে দুর্নীতি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ গত পরশু বলেছেন, ‘প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সহসাই নির্মূল হচ্ছে না, করোনা পরিস্থিতি তিন বছর বা তার চেয়েও বেশি স্থায়ী হবে। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে সিএমএইচে দুই-তিন সপ্তাহ করোনা চিকিৎসা শেষে ডা. আবুল কালাম আজাদ দেশে আতঙ্ক ছড়ানোর এই তত্ত্ব কোথায় পেলেন? একজন চিকিৎসক এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়ানোর অধিকার তার নেই। করোনা চিকিৎসায় সুচিকিৎসা, মানুষকে সচেতন করা ও প্রকৃত সত্য তুলে ধরার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের। কিন্তু মহামারির সময় দুনিয়াজুড়ে সবাই যেখানে আজকের পরিস্থিতি আজকেই সামাল দেয়া নিয়ে ব্যস্ত সেখানে ডিজি আছেন দুই তিন বছরের চিন্তায়।’

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, সবচেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ডাক্তার, সাংবাদিক, পুলিশসহ যারা করোনা মোকাবেলার সঙ্গে যুক্ত আছেন তাদের জন্যও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিশেষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

তিনি বলেন, কেবল যে নিয়োগ ও পদায়নে অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে তাই নয়, কেনাকাটা থেকে শুরু করে বদলি পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর-মন্ত্রণালয়ের সব ক্ষেত্রে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে দুর্নীতি। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেওয়া ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জরুরি সহায়তা’ শিরোনামের প্রকল্পটির আওতায় এক লাখ সেফটি গগলস কেনা হবে। প্রতিটি সেফটি গগলসের দাম ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে প্রতিটি সেফটি গগলস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায়। এই প্রকল্পের আওতায় মোট এক লাখ সাত হাজার ৬০০ পিপিই কেনা হবে। যার প্রতিটির জন্য খরচ ধরা হয়েছে চার হাজার ৭০০ টাকা। পিপিই কেনায় মোট খরচ হবে ৫০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব শর্ত মেনে ওষুধ অধিদপ্তরের সব শর্ত অনুসরণ করে বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি ভালো মানের পিপিই বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দুই হাজার টাকায়। এই প্রকল্পের আওতায় ৭৬ হাজার ৬০০ জোড়া বুট জুতা কেনা হবে। প্রতিটি জুতার খরচ দেখানো হয়েছে এক হাজার ৫০০ টাকা। এই খাতে খরচ ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দেশে বর্তমান বাজারে বুট জুতা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় মিলছে।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, এই লুটের খবর শীর্ষ ব্যক্তিরা জানলেও এখনো পর্যন্ত কোন কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সরকারের অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার মূল চেতনাই হচ্ছে বহুমাত্রিক দুর্নীতি ও লুটপাট। এতে প্রমাণ হয় করোনার চেয়ে দুর্নীতি এখন পরাক্রমশালী। দুর্নীতিবাজরা নিজদেরকে রাষ্ট্রের চেয়েও প্রভাবশালী মনে করছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে