বাংলাদেশে প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম এক সম্মুখযোদ্ধা কামাল লোহানীর(১৯৩৪-২০২০)প্রয়াণে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তিনি এক অর্থে ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তিত্ব।ভাষা আন্দোলনের সময়কাল থেকে এদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ছিলেন কামাল লোহানী।আজীবন তিনি গণমানুষের পক্ষের এক নিরলস সাংস্কৃতিক কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বরিত হয়েছেন। তিনি সাংবাদিকতা দিয়ে পেশাজীবন শুরু করলেও নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন সব সময়। এদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
ছাত্র জীবনেই তিনি যুক্ত হন রাজনীতিতে। ১৯৫২ সালে যোগ দেন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে। সেই সময়ে পুরো পূর্ব বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন। তিনি পাবনায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনে যোগ দেন।সেই সুবাদে যুক্ত হন রাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতি চর্চায়।
১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনে সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তার ছিল দৃঢ় ভূমিকা। শতবর্ষ পালনের আয়োজনে ‘শ্যামা’ নৃত্যনাট্যে তিনি বজ্রসেনের ভূমিকায় অংশ নিয়ে প্রশংসিত হন। ১৯৬২ সালে স্বল্পকাল কারাবাসের পর কামাল লোহানী ‘ছায়ানট’র সাধারণ সম্পাদক হন। সাড়ে চার বছর এই দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৬৭ সালে গড়ে তোলেন ‘ক্রান্তি’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কামাল লোহানী স্বাধীন বাংলা বেতারের সংবাদ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনি দায়িত্ব নেন ঢাকা বেতারের৷
কামাল লোহানী এ দেশের সুস্থ ধারার রাজনীতি, সাংবাদিকতা, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস। চির বিদ্রোহের এক অনন্য অধ্যায় তিনি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনে সর্বাগ্রে থাকা একজন মানুষ। এদেশের প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার এক অনন্য প্রতিভূ কামাল লোহানী। দেশ মাতৃকার এক অকুতোভয় সংগ্রামী সন্তান হিসেবেই কামাল লোহানী এ জাতির ইতিহাসে বেঁচে থাকবেন।