লুটপাট করতে সরকারের অগ্রাধিকার মেগা প্রকল্পে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের স্বাস্থ্য খাত সরকারের প্রায়োরিটিতে নেই। তারা এই জায়গাটাতে কোনো প্রাধান্য দেয় না। তাদের প্রাধান্য একটাই যে তারা মেগা প্রকল্প তৈরি করবে এবং মেগা প্রকল্পে মেগালুট করবে। দুর্নীতির একটা মহোৎসব চলছে।

আজ সোমবার ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

universel cardiac hospital

বিএনপিপন্থী চিকিৎসক সংগঠন ড্যাবের উদ্যোগে চিকিৎসক ও চিকিৎসক পরিবারকে সহযোগিতার জন্য অ্যাম্বুলেন্স সেবা সার্ভিস, মুমূর্ষু রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ, প্লাজমা ডোনার তালিকা প্রণয়ন, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ব্যবস্থা কার্য্ক্রম উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব বক্তব্যের পর ড্যাবের মগবাজার অফিসের সামনে থাকা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসসহ অন্যান্য কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ দেখেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত কিট এখনো সরকার অনুমোদন দেয়নি। সবকিছুর পেছনে সরকারের যে উদ্দেশ্যটা কাজ করেছে বা করছে, সেই উদ্দেশ্যটা হচ্ছে দুর্নীতি। জনগণের সমস্যা সমাধান করার কোনো কাজ তারা করতে চাননি কখনো এবং করবেও না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে—এটা একটা একদলীয় ফ্যাসিস্ট সরকার। একদলীয় ফ্যাসিস্ট সরকার কখনও জনগণের কল্যাণে কাজ করে না। গণতান্ত্রিক একটি সরকার, গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্রব্যবস্থা, এটাই একমাত্র এ ধরনের যে বিশ্ব মহামারি, সেই মহামারিকে মোকাবিলা করার উপযুক্ত হতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসুন, এই দুঃসময়ে আমরা জনগণের পাশে দাঁড়াই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করি, জীবিকাকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। একইসঙ্গে এই রাষ্ট্র যেন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হতে পারে, তার জন্য আমরা সবাই কাজ করি।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে, ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে, এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের চিকিৎসকদের চিকিৎসা করার জন্য যে সুরক্ষা দেয়া দরকার, সেই সুরক্ষা দেয়ার সুযোগটুকুও তারা সৃষ্টি করতে পারেনি। এখনো যেটা করেছেন সেটা কতটুকু—আমরা জানি না। আমারা পরিষ্কার অর্থে বলেছি, এমনকি যারা চিকিৎসা করছেন করোনাভাইরাসের বিভিন্ন হাসপাতালে, তাদের জন্য বড় বড় যে হোটেলগুলো রয়েছে, সেই হোটেলগুলো নিয়ে নেয়া হোক, তাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করা হোক।

করোনাভাইরাস পরীক্ষার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। আজকের পত্রিকায় দেখলাম যে বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এ ধরনের প্যান্ডেমিককে যদি মোকাবিলা করতে হয়, সবার কাছে যে জিনিসটা দরকার, সেটা হচ্ছে সঠিক তথ্য। তারা সঠিক তথ্যটাও দিচ্ছে না, সঠিক তথ্য দেশের মানুষ সঠিকভাবে পাচ্ছে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, আক্রান্তের ব্যাপারে দেখেছেন এই পরীক্ষা এতটুকু পর্যাপ্ত নয়। এত অপর্যাপ্ত যে, সেটার সঠিক চিত্র তুলে ধরছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে, শতকরা ২৩ জন শনাক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ জনে ২৩ জন শনাক্ত হচ্ছে। পরীক্ষায় সরকারের কোনো সক্ষমতা নেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে হারে সংক্রমণ বেড়েছে এবং বাড়ছে প্রতিনিয়ত, এটা সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যেতো, যদি সরকার প্রথম থেকে আন্তরিক হতো এবং সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতো।

২০২০-২১ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন বাজেট দিয়েছে এই সময়ের মধ্যে। আমরা গোটা জাতি আশা করেছিলাম এবারকার বাজেটটা হবে আপদকালীন বাজেট। মানুষকে বাঁচানোর জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতালগুলোকে ইকুইপ্ট করা হবে।

তিনি বলেন, অক্সিজেনের জন্য মানুষ পাগল হয়ে আছে, কোথায় অক্সিজেন পাওয়া যাবে। সিলিন্ডার নেই, আইসিইউ নেই, ভেন্টিলেটর নেই। এসব প্রথম থেকে বলা হয়েছে যে এসব জরুরি ভিত্তিতে জোগাড় করা হোক, ব্যবস্থা করা হোক। তারা সেটার দিকে কোনো গরজ করেনি।

ড্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. আবদুস সেলিমের পরিচালনায় ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সালাম, কোষাধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম শাকিলসহ চিকিৎসক নেতারা বক্তব্য দেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে