ডাকসুর মেয়াদ শেষ, পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাংবিধানিক মেয়াদ শেষ হয়েছে গত শনিবার। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে কোনো ধরনের আশ্বাস বা সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ডাকসু বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই বাংলাদেশের সামগ্রিক ইতিহাসে গৌরবময় ভূমিকা রাখে। ৫২-র সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭১-এর স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এই ছাত্র সংসদ।

নানা নাটকীয়তা ও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তার ঠিক একমাস পরে ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় ডাকসু নির্বাচন। সেখানে নানা বিতর্কের মাধ্যমে জিএস-এজিএসসহ ২৫টি পদে জয়লাভ করে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ভিপি ও সমাজসেবা পদে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লার্টফর্ম বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জয়লাভ করে। একই বছরের ২৩ মার্চ অভিষেক হয় ডাকসু ও হল সংসদের নেতৃবৃন্দের।

ডাকসুর গঠনতন্ত্রের ৬-এর (গ) ধারায় বলা আছে, সংসদে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পদাধিকারীগণ ৩৬৫ দিনের জন্য কার্যালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন না করা যায়, তাহলে কার্যনির্বাহী পদাধিকারীরা অতিরিক্ত ৯০ দিন দায়িত্ব পালন করবেন। ওই ৯০ দিনের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া মাত্র পূর্বতন সংসদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেঙে যাবে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্ধিত ৯০ দিন সময় পার হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই সংসদ ভেঙে যাবে।

সে হিসেবে শনিবার (২০ জুন) ডাকসুর বর্ধিত ৯০ দিন সময় পার হয়ে গেছে এবং সংবিধান অনুযায়ী এই সংসদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেঙে গেছে। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচন কবে তা নিয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

তিনি মত ও পথকে বলেন, একমাত্র আমরা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়ার সাহস করেছি। অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় তা করতে পারেনি। এছাড়া ডাকসু নির্বাচন শুধু আমরা চাইলেই হবে না। এখানে জাতীয় পর্যায়ের অনেক বিষয় জড়িত থাকে।

এছাড়া উপাচার্য ডাকসু নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি। তিনি বলেন, অগ্রিম কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না। সব কিছু নিয়ম মেনেই চলবে।

নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চান নুর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর পরবর্তী ডাকসু নির্বাচন না হওয়া আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।

তিনি মত ও পথকেকে বলেন, ছাত্র সংসদ থাকুক এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চায় না। ছাত্র সংসদ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা ক্ষুণ্ন হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার আদায় করতে পারে। চাপ প্রয়োগ করতে পারে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগামী নির্বাচন না দেয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাব।

নুর আরও বলেন, ডাকসুর মেয়াদ ২৩ মার্চ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ১৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের বাকি দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর পালন করব।

অনতিবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন চান সাদ্দাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর পরই ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।

তিনি মত ও পথকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্বাচিত করেছে। এর বেশি সময় দায়িত্বে থাকা অগণতান্ত্রিক ও অনৈতিক। আমরা অগণতান্ত্রিকভাবে দায়িত্বে থাকতে চাই না। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সাথে সাথেই আমরা নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় নির্বাচনের দাবিতে আমরা মাঠে সোচ্চার হবো।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে