পরিবেশবান্ধব সবুজ অর্থায়নে (গ্রিন ফাইন্যান্স) বিশ্বে যেসব দেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। বাংলাদেশ ছাড়াও মঙ্গোলিয়া ও নেপাল আর্থিক খাতকে টেকসইভাবে বিকাশের জন্য এ ধরনের অর্থায়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ খাতে সংস্কারে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে দেশগুলো। প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এ খাতে এগিয়ে রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের এই অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে। আইএফসির সহায়তাপুষ্ট সাসটেইনেবল ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। গতকাল মঙ্গলবার এটি প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ, জীববৈচিত্র্য হ্রাস এবং সামাজিক বৈষম্যের প্রভাবে দ্রুত এবং উল্লেখযোগ্য ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশগুলো জরুরি ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষিতে এশিয়াতে গ্রিন ফিন্যান্স (যেমন- গ্রিন বন্ড এবং গ্রিন লোন) জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও মঙ্গোলিয়ায় এ খাতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। নেপালসহ দুটি দেশও জাতীয় টেকসই অর্থায়নের রোডম্যাপ বিকাশে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে বাজারের ঝুঁকি হ্রাস এবং সবুজ অর্থ প্রবাহকে উৎসাহিত করাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
আইএফসির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিনা স্টোয়েলজকোচিক বলেন, আমরা এমন এক সময় অতিক্রম করছি যখন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বল্প আয়ের দেশগুলো কোভিড-১৯ দ্বারা বিরূপ প্রভাবের মুখোমুখি। ভবিষ্যতে স্থিতিশীলতার জন্য দেশগুলোর টেকসই আর্থিক বিকাশকে সংস্কার গ্রহণ করা আরও বেশি জরুরি। এশিয়ার এ তিনটি দেশ টেকসই অর্থের উন্নয়নে এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় সবুজ অর্থায়নের বিকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের ৩৮টি দেশ এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত। চীন এবং ইন্দোনেশিয়া টেকসই অর্থায়নে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এরপরে টেকসই অর্থায়ন কর্মকাণ্ডে যে ১০টি দেশ এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম।
বিভিন্ন দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ব্যাংকিং খাতের সংগঠন সাসটেইনেবল ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের (এসবিএন) মাধ্যমে টেকসই অর্থায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। আইএফসি এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা, সবুজ কারখানাসহ পরিবেশ, সামাজিক ও সুশাসনের ঝুঁকি মোকাবেলা করে যে অর্থায়ন করা হচ্ছে, তাকে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বা টেকসই অর্থায়ন বলা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১২ সালে সাসটেইনেবল ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের সদস্য হয়। এর আগের বছর গ্রিন ব্যাংকিং নীতিমালা তৈরি করে। ২০১৭ সালে পরিবেশ ও সামাজিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ওপর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য নীতিমালা করে। গত বছর এই ঝুঁকি পর্যালোচনা কৌশল প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এছাড়া গ্রিন ব্যাংকিং রিপোর্টিংয়ের মানদণ্ড তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে ঋণ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল রয়েছে। পাশাপাশি একটি নীতিমালার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে বার্ষিক মোট বিতরণ করা ঋণের কমপক্ষে ৫ শতাংশ সবুজ অর্থায়ন করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের যুগ্ম পরিচালক আসিফ ইকবাল বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে, সম্পদ দক্ষতার চাবিকাঠি। এ ক্ষেত্রে দারিদ্র্য হ্রাসে টেকসই অর্থায়নের বড় ভূমিকা রয়েছে।