আগামী ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে চলতি শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ বাড়তে পারে মার্চ পর্যন্ত। ক্ষতি পোষাতে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা, ছুটি কমানোসহ নানা ভাবনা রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।
আজ শনিবার শিক্ষা বিষয়ক একটি অনলাইন সেমিনারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন এসব ভাবনার কথা। এডুকেশন রিপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ইরাব) এই সেমিনারের আয়োজন করে।
‘করোনায় শিক্ষার চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোসতাক আহমেদ। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন এবং ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. ফারহানা খানম।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সংকট পুষিয়ে নিতে চলতি শিক্ষাবর্ষ আগামী মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। শিক্ষাবর্ষের ছুটি কমিয়ে শ্রেণি ঘণ্টা বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে বয়স ও শ্রেণি অনুযায়ী শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জন ও দক্ষতা অর্জনের দিকটি আপস করা হবে না। যতটুকু না পড়ালে পরবর্তী ক্লাসে উঠা সম্ভব না হয় সেটিকে গুরুত্ব দেয়া হবে।’
ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শুধু পরীক্ষার জন্য সিলেবাস তৈরি করা হয় না, পরবর্তী ক্লাসে উঠার জন্য তার জ্ঞানার্জনের জন্য যা শেখা প্রয়োজন তা শেখানো হয়। ধারাবাহিক মূল্যায়নের জন্য বছর শেষে পরীক্ষা আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রতি বছর সিলেবাসে নানা ধরনের অনেক ছুটি থাকে, সেসব ছুটি বাতিল করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সংকট এড়াতে চলতি বছর ও আগামী শিক্ষাবর্ষের সিলেবাস থেকে ছুটি কমিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা হবে।’
সিলেবাস কমানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কারিকুলাম বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই সিলেবাস নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। এই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা বিষয়টি নিয়ে বসবো। প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও শিখনফল যতটুকু মধ্যে অর্জন করা যায় ততটুকু নিয়ে সিলেবাস প্রণয়ন করা যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করব।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও আগের মতো এক বেঞ্চে চারজন না বসিয়ে দুই অথবা তিনজন বসতে দেয়া হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হবে। অনির্ধারিত ছুটি পুষিয়ে নিতে আমরা বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তার মধ্যে সিলেবাস বার্ষিক ছুটি কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।’
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘সঠিক তথ্য ও প্রচার মানুষকে সচেতন করা গণমাধ্যমের বড় দায়িত্ব। একদিকে ইন্টারনেটের ওপর সবকিছু নির্ভরশীল হচ্ছে অন্যদিকে এর ব্যবহার বাড়ালে সকল প্রস্তুতি বিফলে যাবে। ইন্টারনেট মানুষের হাতের নাগালে রাখতে হবে এজন্য সরকারকে এ খাতে প্রণোদনা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে শিক্ষার একটি প্রজন্ম হারিয়ে গেলে কয়েক প্রজন্ম হারিয়ে গেল তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’ এই কারণে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইরাব সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক। সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাব্বির নেওয়াজের সঞ্চালনায় এতে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ইরাব কোষাধ্যক্ষ শরিফুল আলম সুমন। আলোচনায় অংশ নেন ইরাব যুগ্ম সম্পাদক ফারুক হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এম এম জসিম, দপ্তর সম্পাদক এম এইচ রবিন, ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার মহিউদ্দিন জুয়েল, ঢাকা টাইমসের রিপোর্টার তানিয়া আক্তার প্রমুখ।