দেশের ৬ জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখেরও বেশি মানুষ। জেলাগুলো হলো কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, সিলেট ও সুনামগঞ্জ।
কুড়িগ্রামে ধরলা-ব্রহ্মপুত্র বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দুই শতাধিক চর ও দ্বীপচরের নিম্নাঞ্চল। এসব এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। নিমজ্জিত হয়েছে ফসল ও গ্রামীণ সড়ক।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, পানি যে হারে বাড়ছে তাতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। কুড়িগ্রাম শহর রক্ষা বাঁধ সম্প্রতি সংস্কার করায় এবার ধরলার পানি শহরে আসতে পারবে না। তবে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় দুই শতাধিক চর ও দ্বীপচরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় নিমজ্জিত হয়েছে ফসল ও গ্রামীণ সড়ক। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ।
পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীতীর ভাঙনের মাত্রা কিছুটা কমেছে জানিয়ে আরিফুল ইসলাম বলেন, এছাড়া কিছু ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে।
চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলোয় বাড়িঘরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে পাট, ভুট্টা, সবজি, তিল, আউশ ধান ও কাউনের ক্ষেত।
ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে নীলফামারীতে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা দুই দিনের বৃষ্টির ফলে তিস্তাসহ জেলার সকল নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে আমন ধানের বীজতলার পাশাপাশি বাদামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারণে বিভিন্ন পুকুরের মাছ বের হওয়ার ফলে মৎস্য চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তার চরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। উজানের ঢল সামাল দিতে খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট। তিস্তার বন্যায় বসতঘরে পানি ঢুকছে। চরাঞ্চলে ১০ হাজার পরিবারের ৩০ থেকে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা।
ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা জানান, তিস্তার বন্যায় ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছচাঁপানী, ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, শৌলমারী, কৈমারীসহ ১০ ইউনিয়নের তিস্তা অববাহিকার ১৫টি চর ও গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ওই সকল এলাকায় বসবাসকারীদের নিরপদে উঁচু স্থানে সরে থাকার জন্য বলা হয়েছে। তিস্তার চরাঞ্চলের বাদাম ক্ষেত ও আমন ধানের বীজতলা হাঁটু থেকে কোমড় পানিতে তলিয়ে রয়েছে। টানা বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার অধিকাংশ নিচু এলাকায় বন্যা দেয়া দিয়েছে।
অন্যান্য চার জেলাতেও বন্যার পানি ঢুকেছে অনেক গ্রামে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী তিনদিন ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এতে পানি বেড়ে ছয় জেলার আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবে। এছাড়া উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতে মধ্য ও স্বল্পমেয়াদি বন্যা বিস্তৃত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
শুক্রবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তর-উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং সেই সব এলাকার সীমান্তবর্তী ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় বন্যাপ্রবণ প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে। কোনো কোনো নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবার কোনো কোনো নদ-নদীর পানি শনিবারের মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করার আভাস রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের ছয় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির, যা আগামী তিন দিনে আরও অবনতি হবে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, বর্তমানে ধরলা ও তিস্তার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নীলফামারীর চরাঞ্চলে বন্যা দেয়া দিয়েছে।
পানি বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াই, মনু, মেঘনা, সাঙ্গুসহ সব প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানির উচ্চতা। আগামী সোমবার নাগাদ এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে সবচেয়ে বন্যাপ্রবণ নদী ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি রোববার নাগাদ বিপৎসীমার অনেক উপরে উঠে যেতে পারে। ফলে বাহাদুরাবাদ, জামালপুর, সারিয়াকান্দি, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানির উচ্চতা বিপৎসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া আজ শনিবারের মধ্যে সুরমা নদীর কানাইঘাট ও সুনামগঞ্জ পয়েন্টে এবং সারিগায়েইন নদী সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
শনিবারের মধ্যে তিস্তা নদীর পানির উচ্চতা স্থিতিশীল ও ধরলা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে উভয় নদীর পানির উচ্চতাই বিপৎসীমার উপরে অবস্থান করতে পারে।
এ অবস্থায় শনিবার নাগাদ কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিলেট এবং সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।
গত কয়েকদিন ধরেই ভারতের আসাম, মেঘালয়, বরাক উপত্যকা, ত্রিপুরা, দার্জিলিং ও সিকিমে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হচ্ছে। সেখানে এমন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে আভাস রয়েছে।
অন্যদিকে দেশে বৃষ্টিপাত আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবাহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হামিদ মিয়া জানান, বাংলাদেশের উত্তরাংশে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগ এবং বগুড়া অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে। চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ বেশি বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।