সুনামগঞ্জে বন্যার আরও অবনতি: পানিবন্দি লাখো মানুষ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

বন্যা
ফাইল ছবি

সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।

জেলার সুরমা নদীর পানি তীর উপচে ঢুকেছে শহরের বিভিন্ন এলাকায়। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত করা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। রোববার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে গত কয়েকদিন থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। একইভাবে বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে। চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৯৫ মিলিমিটার। আর সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা ১৯০ মিলিমিটার।

এদিকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মধ্যবাজার, উকিলপাড়া, কাজীর পয়েন্ট, মাছবাজার, সবজিবাজার, ষোলঘর, নবীনগর, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী এলাকায় সুরমা নদীর তীর উপচে ঢলের পানি ঢুকেছে। এসব এলাকায় কিছু মানুষের বসতঘরেও পানি ঢুকেছে।

এদিকে জেলার সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জ-ছাতক উপজেলার যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। জেলার তাহিরপুর বাদাঘাট সড়ক ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বিভিন্ন স্থাপনা পানিতে তলিয়ে গেছে। ভারিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন। ছাতক উপজেলার পৌর শহরের কিছু এলাকা এবং উপজেলার আরও পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

জেলার তাহিরপুর উপজেলার প্রায় ৫০টি গ্রামে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামগুলো হলো বালিজুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণকূল, আনোয়ারপুর, পাতারি, তিওর জালাল, লোহাচুরা, বড়খলা, মাহতাবপুর বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগড়া, ঘাগটিয়া, পাঠানপাড়া, গড়কাটি উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রজনীলাইন, রাজাই, শান্তিপুর, চানপুর, দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের পুরান খালাস, সাদেরখলা, চতুর্ভজ, কাউকান্দি, জামলাবাজ তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের জামালগড়, চিকসা, গোবিন্দশ্রী, গাজীপুর, টাকাটুকিয়া দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মারালা, নোয়ানগর, রাজধরপুর, পৈন্ডপ, নোয়াগাঁও, সন্তোষপুর, ইকরামপুর, পাঠাবুকা, লামাগাঁও, দুমাল, ভবানীপুর, শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের বাগলী, দুদের আউটা, ইন্দ্রপুর, মন্দিয়াতা সহ ৫০টি গ্রাম।

বালিজুড়ি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য দক্ষিণকূল গ্রামের বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে দক্ষিণকূল গ্রামের সব রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। গ্রামের কোনো পরিবারেই রান্নাবান্নার কাজ করতে পারছে না। তারা শুকনো খাবার সংগ্রহ করে খাবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ বলেন, আমরা উপজেলা দুর্যোগ কমিটির জরুরি সভা করেছি। পাহাড়ি ঢলের পানিতে তাহিরপুরের গ্রামীণ অবকাঠামো অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠছে। শুকনো খাবারের প্যাকেট প্রস্তুত চলছে। আমরা শুকনো খাবার নিয়ে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দেবো।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে সরকারের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জে ভারি বৃষ্টির সঙ্গে উজান থেকে ব্যাপক পাহাড়ি ঢল নামছে। এ কারণে নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। উজানে চেরাপুঞ্জিতে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে এ কারণে পানি আরো বাড়বে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১৪৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পানিবন্দি মানুষদের জন্য ৪১০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ প্রায় ৩০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলার বন্যায় প্রায় ৫০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব পরিবারে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে