বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন ছাড়াই আজ সোমবার জাতীয় সংসদে পাস হচ্ছে অর্থবিল। আর আগামীকাল মঙ্গলবার পাস হবে ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেট, যাতে প্রায় পৌনে ছয় লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের ফর্দ ধরা হয়েছে। পরদিন ১ জুলাই থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হবে।
করোনা মহামারিতে দেশ তথা বিশ্ব অর্থনীতিতে নজিরবিহীন সঙ্কটের মধ্যে একেবারেই ভিন্ন প্রেক্ষাপটে গত ১১ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সেদিন ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন তিনি।
করোনার কারণে জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যদের এবার অধিবেশনে যোগ দিতে নিরুসাৎহিত করা হয়। স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কম সংখ্যক সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে অধিবেশন চলেছে। সাংবাদিক-অতিথিদের অধিবেশনে ঢোকার অনুমতি ছিল না।
বাজেট পেশের পর কিছু জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ইতোমধ্যে মতামত দিয়েছেন। সোমবার আরও কয়েকজন বাজেটের উপর আলোচনা করবেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেটের উপর আলোচনা করবেন।
প্রথা অনুযায়ী, সবার আলোচনা বা মতামতের ভিত্তিতে বাজেটে কিছু সংযোজন-বিয়োজন আনা হতে পারে। অর্থবিল পাসের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত বাজেটের উপর বক্তব্য দেবেন। তারপর অর্থমন্ত্রী বাজেটের উপর সমাপনী বক্তব্য দেবেন এবং অর্থবিল পাসের জন্য উত্থাপন করবেন।
কোনো সংশোধনী আনতে হলে অর্থমন্ত্রীর সমাপনী বক্তব্য এবং অর্থবিল পাসের আগে প্রধানমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ আমলে নিয়ে সেসব বিষয়ে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন শুরু হবে। কয়েকজন সংসদ সদস্যের বক্তব্যের পর বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বক্তব্য দেবেন। এরপর সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বাজেটের উপর সমাপনী বক্তব্য দেবেন এবং অর্থবিল ২০২০ পাসের জন্য উত্থাপন করবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১১ জুন অর্থমন্ত্রীর পেশ করা বাজেটে ছোটখাটো দু-একটি বিষয় ছাড়া তেমন কোনো বড় সংশোধনীর সম্ভাবনা নেই। তবে মোবাইল ফোনের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত কর প্রত্যাহার করা হতে পারে। একইভাবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় নিয়ে জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব বাড়াতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হতে পারে। কর ও ভ্যাট কাঠামোতে বড় কোনো পরিবর্তনও আসছে না। এর বাইরে তেমন কোনো সংশোধনীর আলোচনা নেই।
করোনার কারণে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও করোনা মোকাবিলায় এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। নিত্যপণ্য চাল, চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ এবং লবণের মতো অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো হয়েছে বাজেটে। কর ছাড়ের বাজেট হওয়ায় অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে কিছুটা চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম বাজেট অধিবেশন মাত্র ৮ কার্যদিবসে শেষ হচ্ছে। গত ১০ জুন শুরু হওয়া অধিবেশন এ পর্যন্ত ৫ কার্যদিবস বসেছে। আজ সোমবার অর্থ বিল পাস ও মঙ্গলবার (৩০ জুন) বাজেট পাস হবে। এরপর একদিন সমাপনী হবে।
অর্থাৎ, অতীতে বাজেট অধিবেশন দীর্ঘ হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এটি হচ্ছে সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন। যে অধিবেশনে মাত্র একদিন প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত এই অধিবেশনে অন্তত ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা আলোচনার পরিকল্পনা থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা কমিয়ে আনা হয়। অতীতে বাজেটের ওপর ৬০ থেকে ৬৫ ঘণ্টা আলোচনার রেকর্ড রয়েছে।