রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নৃশংসতার ঘা এখনও দগদগে। পুড়িয়ে দেওয়া লাখো ঘরবাড়ি এখনও বিরান। রোহিঙ্গা গণহত্যায় বৈশ্বিক নিন্দার মুখে থাকা মিয়ানমার এবার বাংলাদেশ লাগোয়া রাখাইন প্রদেশে কথিত বৌদ্ধ বিদ্রোহীদের দমনে বড় আকারে শুদ্ধি অভিযান চালাতে যাচ্ছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, রাখাইনে অভিযানের খবরে ভীত-সন্ত্রস্ত হাজার হাজার গ্রামবাসী ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। বর্মি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার রাখাইনের বৌদ্ধ গোষ্ঠীকে বিদ্রোহী আখ্যা দিয়ে কথিত এই ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালানো হবে জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসন কয়েক ডজন গ্রাম প্রধানকে সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছে। এই বার্তার পরই ঘর ছাড়ছেন রাখাইনের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অনেক মানুষ। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এই আদেশ জারির বিষয়টি স্বীকার করেছে মিয়ানমারের সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
গ্রাম প্রধানদের কাছে পাঠানো ওই সতর্ক বার্তা রাখাইন রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রী কর্নেল মিন থানের মাধ্যমে যাচাই করেছে রয়টার্স। এতে বলা হয়েছে, কয়েকটি গ্রামে বিদ্রোহীদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে খবর আছে। তবে অভিযান ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে চালানো হবে রয়টার্সকে জানিয়েছেন মিন থান।
এদিকে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হথাই এক বিবৃতিতে সামরিক বাহিনীকে ‘শুদ্ধি অভিযান’ পরিভাষাটি ব্যবহার না করতে সরকার নির্দেশ দিয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন। লোকজনকে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ সম্বলিত চিঠিটিও প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মিয়ানমারের এই মুখপাত্র। যদিও চিঠি প্রত্যাহারের নির্দেশের বিষয়ে রয়টার্স নিশ্চিত হতে পারেনি বলে জানিয়েছে।
২০১৭ সালে নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ধুয়ো তুলে রাখাইনে সংখ্যাগরিষ্ট রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক আকারে নির্যাতন-নিপীড়ন ও নির্বিচারে হত্যা-ধর্ষণ শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ওই ঘটনাকেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’ বলে দাবি করেছিল মিয়ানমার সরকার।
ওই সময় প্রাণে বাঁচতে অন্তত ৮ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে ঠাঁই নেয়। আগে থেকে অবস্থানরত শরণার্থীদের নিয়ে বাংলাদেশে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বলে অনুমান করা হয়।
রোহিঙ্গারা ছাড়াও রাখাইনে মিয়ানমারের আগ্রাসন বিরোধী বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। প্রায় সময় ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ অভিহিত করে তাদের সঙ্গে মিয়ানমার বাহিনীর সংঘর্ষের খবরও আসে।
এদের অনলাইনভিত্তিক প্রচারণা ঠেকাতে গেল বছরের জুন থেকে রাখাইনে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে অং সান সু চি সরকার। একারণে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে রাখাইনের মানুষ।