করোনাভাইরাসের পরীক্ষায় নিজেদের উদ্ভাবিত কিটের অনুমোদন নিয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ডিজির সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন গণস্বাস্থ্যের ‘জিআর কোভিড-১৯ র্যাপিড ডট ব্লোট কিট’ প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল।
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের এই পরীক্ষালব্ধ ফল নিয়ে ঔষধ প্রশাসনের ডিজির সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তিনিই আজকের বৈঠক উদ্বোধন করেছেন এবং খুবই ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি তার কাছ থেকে। তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু মৌখিক আলোচনায় তো সব হবে না। বিষয়টি তো বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই বৈজ্ঞানিক নথি ঔষধ প্রশাসনে জমা দিতে হবে। আমরা আগামীকালের মধ্যেই ওগুলো জমা দেব।’
আজ রোববার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ‘জিআর কোভিড-১৯ র্যাপিড ডট ব্লোট কিট’ প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল এবং প্রকল্পের সমন্বয়ক ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার ও ড. নিহাদ আদনান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
বিজন শীল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঔষধ প্রশাসনের (এফডিএ) আমব্রেলা গাইডলাইন অনুসরণ করে তারা অ্যান্টিবডি কিটের ডিজাইন আপডেট করেছেন। তাদের কিটের সংবেদনশীলতা (সেনসিটিভিটি) এখন ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ ও নির্দিষ্টতা (স্পেসিফিসিটি) ৯৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পরীক্ষায় কিটটির সর্বোচ্চ সংবেদনশীলতা পাওয়া গিয়েছিল ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ ও নির্দিষ্টতা ৯৬ শতাংশ। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানিয়েছিল, এফডিএ’র আমব্রেলা গাইডলাইনের আলোকে কিটের সর্বনিম্ন সংবেদনশীলতা ৯০ শতাংশ ও নির্দিষ্টতা ৯৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যান্টিবডি কিটের সংবেদনশীলতার মাত্রা ন্যূনতম ৯০ শতাংশের কম হওয়ায় এর অনুমোদন দেয়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তবে, কিটটির উন্নয়নের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল ঔষধ প্রশাসন।
কিট নিয়ে আশা প্রকাশ করে বিজন কুমার শীল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ঔষধ প্রশাসনের (এফডিএ) আমব্রেলা গাইডলাইন অনুযায়ী যে প্রটোকল আমাদের জমা দিতে বলা হয়েছে, সেটা আমাদের জন্য খুবই সহজ। কারণ, এর আগে আমরা এর চেয়ে কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আমরা নতুন প্রটোকল জমা দিলে সেটি যাচাই শেষে ঔষধ প্রশাসন এক্সটার্নাল ভ্যালিডেশনের জন্য পাঠাবে। সেখান থেকে পরীক্ষা রিপোর্ট এলেই আমরা রেজিস্ট্রেশন পেয়ে যাব। ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ সেনসিটিভিটির ব্যাপারে আমরা শতভাগ নিশ্চিত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে কিটের ইন্টারনাল ভ্যালিডেশন করেছি। কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় ‘পজিটিভ’— এমন ৪৫ জন রোগীকে আমরা নির্ধারণ করেছিলাম। পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসার ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। প্রত্যেকটি নমুনা এনজাইম লিংকড ইমিউনো সরবেন্ট অ্যাসে (এলিসা) পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে কিটের কার্যকারিতা নির্ধারণে ৪৩টি নমুনা ব্যবহার করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪২টির ফল ‘পজিটিভ’ ও একটির ‘নেগেটিভ’ এসেছে। অর্থাৎ কিটের সংবেদনশীলতার হার ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ।’
আজই নথি প্রস্তুত করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা নথি প্রস্তুত করে নিয়ে গিয়েছিলাম। উনারা বলেছেন আরও বিস্তারিত ফরম্যাটে নিয়ে যেতে। ওটা করতে আমাদের বেশি সময় লাগবে না। আমরা দ্রুতই প্রস্তুত করে ফেলতে পারব।’
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিনিধি দলের বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘গণস্বাস্থ্যের টিম এসেছিল। আলোচনা করেছে। আমরা এ বিষয়ে আমাদের অফিসিয়াল বক্তব্য পরবর্তীতে জানিয়ে দেব।’