বরেণ্য সাহিত্যিক ও গবেষক অরুণ সেন আর নেই। গতকাল শনিবার (৪ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টায় কলকাতার নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি।
বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে যুক্ত এই সাহিত্যিক ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন।
অরুণ সেনের জন্ম ১৯৩৬ সালে। পূর্বপুরুষ পূর্ববঙ্গের হলেও আজন্ম কলকাতাবাসী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ শেষ করে কলকাতারই একটি কলেজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনা করেন অবসরকাল পর্যন্ত।
বাংলাদেশের সাহিত্যে তাঁর আগ্রহ ও চর্চার কারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে বাংলাদেশ বিষয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে আমন্ত্রিত হন। সেখানকার কর্মসূত্রে বাংলা বিভাগের ওই বিষয়ের পাঠক্রম তৈরি করেন তিনিই। বাংলাদেশ ও তার সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক লেখালেখি, সেমিনারে ভাষণ বা পাঠ, বাংলাদেশ-বিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তার সক্রিয়তা সর্বজনবিদিত।
অরুণ সেন যে দুটি বিষয়ে অনেককাল ধরেই নিমগ্ন, তাঁর একটি বিষ্ণু দে, অপরটি বাংলাদেশ। এই দুই প্রসঙ্গে তাঁর বইয়ের সংখ্যাও বেশ কিছু। তাঁর অনন্য দুই কীর্তি- গবেষণাগদ্য ‘সেলিম আল দীন: নাট্যকারের স্বদেশ ও সমগ্র’ আর সম্পাদিত গ্রন্থ ‘মোহাম্মদ রফিক: নির্বাচিত কবিতা’।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনা সভায় তিনি বাংলাদেশের সাহিত্য বিষয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন বা নিবন্ধ পাঠ করেছেন। সেগুলোরই কয়েকটি নিয়ে তার বই সাহিত্যের বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর কয়েকটি বই- দুই বাঙালি, এক বাঙালি, বাংলা বই বাংলাদেশের বই, দুই বাংলায় রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য। এ বিষয়ে তার সম্পাদিত বই- বাঙালি ও বাংলাদেশ, দেশে বাংলাদেশে/বাঙালির আত্মসত্তার নির্মাণ, বাংলাদেশের নির্বাচিত উপন্যাস সংকলন ইত্যাদি। তার রচিত ও সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা ৪০ এর অধিক। পরিচয়, সাহিত্যপত্র ও প্রতিক্ষণ- এই তিনটি পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন সময়ে।
বাংলাদেশ ছাড়াও তার আরেকটি বিশেষ আগ্রহের বিষয় কবি বিষ্ণু দে। ১৯৭০ সালে প্রকাশ হয়েছে ‘বিষ্ণু দে’র বাংলাদেশ’ বইটি। সম্প্রতি বাংলাদেশের বাতিঘর থেকে বইটি পুনঃমুদ্রিত হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাগদ্য রচনার জন্য ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি থেকে বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন এই নন্দিত সাহিত্যিক।