দেশে কর্মরত অভিবাসীর সংখ্যা ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে নতুন একটি আইন করছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত। আইনটি এখনও বিল আকারে রয়েছে। পাস হলেই দেশটিতে কর্মরত প্রায় আট লাখ ভারতীয় কুয়েত ছাড়তে বাধ্য হবেন। আল-জাজিরার সোমবারের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
কুয়েতে বর্তমানে কর্মরত অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ৩৪ লাখ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ভারতীয়। অথচ দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ৪৮ লাখ। তাহলে অর্থ দাঁড়াচ্ছে, দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশ কুয়েতি নাগরিক। বিশালসংখ্যক অভিবাসীর সংখ্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে এ আইন।
গত সপ্তাহে কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল খালিদ আল সাবাহ বলেছেন, দেশে অবস্থানরত অভিবাসীর সংখ্যা ৭০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। তার ওই মন্তব্যের পর সরকার নতুন এই শ্রম অর্থাৎ অভিবাসী আইন তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছে।
ওই বিলে বলা হচ্ছে, কুয়েতে বসবাসকারী ভারতীয়দের সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশের বেশি কখনই যেন না হয়। পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের এই দেশটির অর্থনীতি তেলবিক্রির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসে অর্থনৈতিক সংকট এবং তেলের দাম পতনের কারণেই এ সিদ্ধান্ত।
কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল খালিদ আল সাবাহ তার বক্তব্যে তেল ও গ্যাস শিল্পের ওপর নির্ভরতা কমানোর কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এসব খাতগুলোর ওপর নির্ভরতা থেকে দূরে সরে কুয়েতের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য নিয়ে আনার সময় এসেছে। মূলত তার ওই বক্তব্যের পর আইন প্রণয়নের বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
কুয়েত টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী রোববার কুয়েত আইনসভার স্পিকার মারজুক আল-ঘানেম বলেন, বিলটির মাধ্যমে দক্ষকর্মী নিয়োগের ওপর আরও বেশি মনযোগী হতে পারবে কুয়েত। কেননা দেশে এখন ১৩ লাখ শ্রমিক রয়েছেন, যাদের হয় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই কিংবা বড়জোর পড়তে ও লিখতে পারেন।
কুয়েতে সরকারি খাতে চাকরি করেন এমন অভিবাসীদের ঘাড়েও প্রস্তাবিত এই কোটাভিত্তিক বিলের খড়গ পড়বে। কুয়েত ভারতীয় দূতাবাস সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রায় ২৮ হাজার ভারতীয় নার্স, জ্বালানি খাতের প্রকৌশলী এবং কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী হিসেবে দেশটিতে কর্মরত রয়েছেন। তবে বেশিরভাগ কাজ করেন বেসরকারি খাতে।
শুধু তাই নয়, অনেকে অভিবাসী কুয়েতে নির্মাণখাত থেকে শুরু করে আরও অনেক অসংগঠিত খাতে কাজ করেন। মূলত সস্তা শ্রমের খাতগুলো। তবে এবার সেই সব শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টিও নির্দিষ্ট অর্থাৎ সীমিত করার কথা বলা হয়েছে খসড়া ওই আইনে। এই কথা জানিয়েছেন, স্পিকার মারজুক আল-ঘানেম।
কুয়েত ভারত ছাড়াও মিসর, পাকিস্তান এবং ফিলিপাইনের অসংখ্য অভিবাসী এই আইনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই দেশটিতে অভিবাসীবিরোধী সমালোচনা জোরালো হতে থাকে। রাজনীতিবিদ ও নামকরা ব্যক্তিরা দেশে অভিবাসীর সংখ্যা কমানোর দাবি জানান।
তবে আইনটি কবে থেকে কার্যকর হবে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যেই কুয়েতের পার্লামেন্টে এই বিল আইনে পরিণত হবে। কেননা দেশটির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা নভেম্বরে। তার আগে আইনটি পাস করতে চাচ্ছে সরকার।