বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের শেষকৃত্য আগামী ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত এই শিল্পীর বোন জামাই ডা. প্যাট্টিক বিপুল বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আজ বুধবার রাতে এন্ড্রু কিশোরের ছেলে এন্ড্রু জুনিয়র সপ্তক অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরবেন। তবে শিল্পীর মেয়ে সংঘার ফিরতে দেরি হচ্ছে। সে ফিরবে আগামী ১৩ জুলাই রাতে। ১৪ জুলাই সকালে রাজশাহীতে পৌঁছাবে। এরপর ১৫ জুলাই কিশোরের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।
ডা. প্যাট্টিক বিপুল বিশ্বাস বলেন, ১৫ জুলাই সকাল ৯টার দিকে মরদেহ সিটি চার্চে নিয়ে ধর্মীয় আচার শুরু করা হবে। সাড়ে ৯টায় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। চলবে বেলা ১১টা পর্যন্ত। এন্ড্রু কিশোরের ইচ্ছা অনুযায়ী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার মরদেহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে নেয়া হবে। সেখানে তাঁর শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ভক্তদের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ দেয়া হবে।
এরপর এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ রাজশাহী কলেজে রাখা হবে। সেখানেও ভক্ত-অনুরাগীদের শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ দেয়া হবে। শ্রদ্ধা জানানো শেষে বেলা সাড়ে ৩টায় এন্ড্রু কিশোরকে সমাধিস্থলে নেয়া হবে।
ডা. প্যাট্টিক বিপুল বিশ্বাস বলেন, সমাধিস্থলে তার বাবা-মায়ের সমাধি থাকলেও তাদের কাছেই তাকে সমাধি করা হবে এমন নয়। কিশোরের পছন্দের একটি জায়গা তিনি আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। সেই পছন্দের জায়গাতে তাঁকে অনন্তকালের জন্য সমাহিত করা হবে।
সোমবার (৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রাজশাহী মহানগরীর কোর্ট সংলগ্ন মহিষবাথান এলাকায় বোনের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্লে-ব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে শিল্পীর নিথর দেহ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী শোক জানিয়েছেন। প্রিয় শিল্পীকে হারিয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা বাংলাদেশে।
এন্ড্রু কিশোর ক্যানসারে ভুগছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সিঙ্গাপুরেই ছিলেন চিকিৎসার জন্য। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি চিকিৎসার পরও দ্বিতীয়দফায় তার দেহে ক্যানসার বাসা বাঁধে। ফলে চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন। তাই শিল্পীর ইচ্ছায় তাকে দেশে আনা হয় গত ১১ জুন। এরপর থেকে তিনি বোনের বাসায় ছিলেন। ঢাকা থেকে রাজশাহী এলে তিনি এই বাসাতেই থাকতেন।
১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতেই জন্ম নেন এন্ড্রু কিশোর। প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর খ্যাতনামা ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমায় ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয়। সেই শুরুর পর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
এরপর আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেও গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গান উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য দেশ-বিদেশের আরও অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।