অনিয়মে জড়িতদের ধরার পরও আমাদের দোষারোপ করা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

মত ও পথ প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি

দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে যে জড়িত থাকুক তার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘দুর্নীতিবাজদের ধরেই যেন আমরা চোর হয়ে যাচ্ছি। তাদের ধরার পরও আমাদের দোষারোপ করা হচ্ছে। ’

বৃহস্পতিবার দুপুরে সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

এর আগে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বহুল আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরেন।

এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে যাই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি, নেব এবং এটা অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কে কোন দলের সেটা বড় কথা নয়- দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িতদের আমরা ধরে যাচ্ছি। ধরেই যেন আমরা চোর হয়ে যাচ্ছি। আমরা ধরার পর আমাদের দোষারোপ করা হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র নষ্ট করে দিয়ে গেছে ১৯৭৫ এর পরে যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তারাই। কারণ, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য এরা মানুষকে দুর্নীতি শিখিয়েছে, কালো টাকা শিখিয়েছে, ঋণখেলাপি শিখিয়েছে, তারা এই সমাজটাকে কলুষিত করে গেছে। মানুষ আগে যে একটা আদর্শ নিয়ে চলত, নীতি নিয়ে চলত, দীর্ঘদিন এদেশে এই মিলিটারি ডিক্টেটরশিপ এদেশের মানুষের চরিত্র হরণ করেছে। কারণ, তাদের অবৈধ ক্ষমতাটাকে নিষ্কণ্টক করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। তারা বছরের পর বছর এই দুর্নীতির বীজ বপন করেছে। তা মহীরুহ হয়ে গেছে। মানুষের চরিত্রটাই নষ্ট করে দিয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে চরিত্রহীনতা একেবারে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ছিল। সেখানে আপনি যতই চেষ্টা করেন এর মূলোৎপাটন যথেষ্ট কঠিন। তারপরও এর মধ্যে যে খবরগুলো পাচ্ছেন, এটা কারা করছেন? আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর কে কোন দলের সেটা বড় কথা নয়- এই ধরনের দুর্নীতির সাথে জড়িত, অনিয়মে জড়িত আমরা ধরে যাচ্ছি। ধরেই যেন আমরা চোর হয়ে যাচ্ছি। আমরা ধরার পর আমাদের দোষারোপ করা হয়।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। এর আগে তো দুর্নীতি ছিল, অনিয়ম ছিল। সেভাবেই রাষ্ট্র চলেছে। কিন্তু আমরা আসার পর সেগুলো মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। যতটুকু পারি সেগুলো আমরা সুন্দর করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

‘আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এই অনিয়মগুলো আমরা নিশ্চয়ই মানব না। যে যাই হোক তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, নেব এবং এটা অব্যাহত থাকবে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘরে বসে বাজেটের সমালোচনা করা, এটা অনেকেই করতে পারে। কিন্তু মাঠে গিয়ে কাজ করার মতো কয়জন আছে? বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক যারা তারাই শুধু এই কাজ করে। তারাই শুধু মাঠে গিয়ে কাজ করে।’

‘স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানলে করোনা মোকাবেলা সহজ হতো’

মানুষ পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা মোকাবেলা সহজ হত বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার মানুষকে রক্ষা করা ও মৃত্যুহার কমানোর কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। দুর্ভাগ্য, করোনাভাইরাস সবকিছু স্থবির করে দিয়েছে। এটা অত্যন্ত কষ্টকর ও দুঃখজনক। তবে আমরা চেষ্টা করেছি যতদূর সম্ভব মানুষকে রক্ষা করা এবং মৃত্যুহার কমানোর। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা পরিকল্পনা করেছি। পদক্ষেপ নিয়েছি। তার সুফল মানুষ পাচ্ছে। দেশের মানুষ আরও সচেতন হলে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ মেনে চললে করোনা মোকাবিলায় আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঝড়ঝঞ্ঝা, দুর্যোগ, রোগ-শোক এগুলো থাকবেই। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকতে পারে না। জীবন তো চলমান। জীবনকে চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই যদি কখনও বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হয়, তখন যেন তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারি তা মাথায় রেখেই এই বাজেটটি দিয়েছি। যদি ভালো হয়, তাহলে তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো। আর যদি সারা বিশ্বে স্থবিরতা চলে, আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না। তবে চলমান থাকবে আমাদের অর্থনীতি। সেই লক্ষ্যেই আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে